প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নিঃসঙ্গযাপন, ৬৬ বছর স্নান করেননি ‘পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা মানুষ’

পেরিয়ে গেছে ছ’ দশকেরও বেশি সময়। তবুও তাঁর ত্বক ছুঁতে পারেনি এক ফোঁটা জল। হ্যাঁ, স্নান না করেই, ধুলো-বালি মেখে অপরিষ্কার থাকতেই পছন্দ করেন ইরানের বাসিন্দা আমো হাজি। ২০১৪ সালে ‘তেহরান টাইমস’ সংবাদপত্র প্রকাশ্যে এনেছিল তাঁর কথা। আর প্রায় ৬৬ বছর স্নান করার প্রতি তাঁর এই চূড়ান্ত অনীহার কারণেই তাঁকে অভিহিত করা হয় বিশ্বের সবথেকে নোংরা মানুষ হিসাবে।

দক্ষিণ ইরানের ফার প্রদেশের দেলগাহ অঞ্চলে বসবাস আমো হাজির। বসবাস বলতে উত্তপ্ত মরু-অঞ্চলেই খোলা আকাশের নিচেই ঠিকানা তাঁর। এই প্রচণ্ড উষ্ণ আবহাওয়াতে কীভাবে স্নান না করেও বেঁচে রয়েছেন তিনি, তা আজও এক রহস্য সারা পৃথিবীর কাছে। মাঝে মধ্যে তীব্র রোদ থেকে মাথা বাঁচাতে তিনি ব্যবহার করেন প্রাচীন একটি লৌহ পাত্রকে। অন্যদিকে সন্ধের পর মরু অঞ্চলে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। সেসময় ছেঁড়া-ফাটা পোশাক পরেই চলে যায় আমু হাজি-র। 

তবে এখানেই শেষ নয় বিস্ময়ের, তাছাড়াও অবাক করে তাঁর জীবনযাপনের আশ্চর্য ধরণ। একদিকে যেমন স্নান না করেই তিনি রয়েছেন প্রায় ৬৬ বছর, তেমনই পচা-গলা প্রাণীর মাংস দিয়েই মধ্যাহ্নভোজ সারেন হাজি। দিনে নিয়ম করে পান করেন ৫ লিটার জল। তাও ড্রেন বা নালার নোংরা জল, জং ধরা লোহার পাত্রে। পাশাপাশি নিয়মিত ধূমপানেও অভ্যস্থ আমু হাজি। তবে তা সাধারণ তামাক নয়। বন্য প্রাণীর বিষ্ঠা পাইপে ভরে ধূমপান করেন তিনি। এই যাপন অস্বাস্থ্যকর মনে হলেও, বছরের পর বছর এভাবেই দিন কাটানোর পরেও দিব্যি সুস্থ রয়েছেন তিনি। 

স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁর জন্য একটি ইটের বাড়িও তৈরি করে দিয়েছেন বটে। তবে সে বাড়ির মাথায় ছাদ নেই কোনো। তবে সেই বাড়ির মাটির তলায় সমাধির কায়দা নিজে গর্ত করে সেখানে রাতের বেলায় ঢুকে থাকেন আমো হাজি। তবে এমন উদ্বাস্তু জীবন-যাপন হলেও নিজেকে কেমন দেখতে লাগছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল তিনি। একটি ভাঙা গাড়ির ব্যাক-ভিউ মিরর নিত্যদিনের সঙ্গী তাঁর। তা দিয়েই চলে স্ব-পর্যবেক্ষণ। ছেঁড়া জামা ঠিক করে নেন তিনি। চুল-দাড়ি বেড়ে গেলে আগুনে পুড়িয়ে তা আবার মানানসই করে নেন।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, এমন অদ্ভুত জীবনের আগে কী করতেন তিনি? স্থানীয় বৃদ্ধদের মুখে প্রচলিত, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েই এমন অবস্থা হাজি-র। ১৯৫৪ সালে নাকি শেষ তিনি স্নান করেছিলেন, এই তথ্যও পাওয়া যায় গ্রামের বৃদ্ধদের থেকে। ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদে ডুবতে ডুবতে আজ এই অবস্থায় পৌঁছেছেন হাজি। নিজের পূর্ব জীবন, এমনকি নিজের নামও আর মনে নেই তাঁর। ‘আমো হাজি’ নামটিও দেওয়া স্থানীয় মানুষেরই। যার ফার্সি অর্থ ‘দয়ালু বৃদ্ধ’। ‘পাগল’ হিসাবে পরিগণিত হলেও কারোরই কোনোদিন ক্ষতি করেননি তিনি। কেউ তাঁকে আক্রমণ করলেও না। সেজন্যই এমন নামকরণ তাঁর। বিশ্বের সবথেকে নোংরা ব্যক্তির সেই পরিচ্ছন্ন সত্তাটাই যেন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় আজকের ‘সভ্য’ সমাজকে...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কখনও স্ত্রী-র ভয়, কখনও আবার স্বার্থসিদ্ধি; নিজেই নিজেকে অপহরণ করেছেন যে সব ব্যক্তি

Latest News See More