দিল্লির গলি চুরিয়ালান স্ট্রিট জুড়ে ছড়িয়ে আছে বিস্তীর্ণ বস্তি অঞ্চল। তার মধ্যেই সপ্তাহখানেক আগেও দেখা যেত বহু প্রাচীন একটি দরজা। একটি সবুজ দরজা। তার উপরে অর্ধবৃত্তাকার একটি আর্ক। আর্কের গায়ে ফুলের মতো কারুকার্য। গঠন দেখলেই বোঝা যেত, কত অসংখ্য ইতিহাস জড়িয়ে ছিল তার গায়ে গায়ে। সামনে দাঁড়িয়ে কল্পনায় পৌঁছে যাওয়া যেত মোঘল যুগের কোনো এক সময়ে। যখন আগ্রা-দিল্লির ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের অসংখ্য নিদর্শন গড়ে উঠছে। কিন্তু সেইসব ইতিহাসের তত্ত্বতালাশ হওয়ার আগেই হারিয়ে গেল সেই সবুজ দরজা। নেই তার পিছনের বাড়িটাও। শুধু কিছু ভাঙা ইঁট আর একটা কালো ত্রিপল দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।
বিখ্যাত উপন্যাস ‘টুইলাইট ইন দিল্লি’-র চরিত্রগুলি বাস করত কিছু দূরে নিয়ারিয়ান মহাল্লায়। সেই গল্পের কাহিনিই যেন মনে পড়ে যেত এই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। অথচ তার মধ্যেই আড়াল করে রেখেছিল দরজার পিছনে প্রতি মুহূর্তে বদলে যেতে থাকা জীনযাত্রাকে। যে বাড়ির মানুষগুলির সঙ্গে ইতিহাসের যোগ অনেক আগেই ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে বেঁচে থাকাটাই যাঁদের প্রতিদিনের লড়াইয়ের উদ্দেশ্য। আর এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত তো হার মানতেই হবে মুনাফাবাজ ব্যবস্থার কাছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার এক মুদি দোকানদারের পরিবার বাস করতেন ঐ বাড়িটিতে। কিন্তু আর্থিক কারণেই তাঁদের এই বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। এক প্রোমোটার সেই বাড়ি ভেঙে হাউজিং কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে।
একটি সবুজ দরজা মৃত্যুর ভিতর দিয়ে জানিয়ে দিয়ে গেল কীভাবে এদেশের বুক থেকে অযত্নে আর অবহেলায় মুছে যায় অসংখ্য ইতিহাস। এখন আর চেষ্টা করলেও হয়তো খুব বেশি তথ্য জানা যাবে না ওই দরজা সম্বন্ধে। তবে একথাও ঠিক, যতদিন এই দরজা টিকে ছিল ততদিন কেউই সেভাবে নজর দেননি। কিন্তু তার অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা নেই নেই ভাব গ্রাস করেছে দিল্লির মানুষকে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠালেন রাজপুত রানি কর্ণাবতী, সাড়া দিলেন সম্রাটও