করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানুষ বরাবর তাকিয়ে ছিলেন প্রতিষেধকের দিকে। অবশেষে প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হলেও ভারতের প্রতিটি মানুষের কাছে সেই সুযোগ এখনও এসে পৌঁছয়নি। অবশ্য মে মাসের শুরু থেকেই দেশের সমস্ত বয়সের মানুষ প্রতিষেধক পাবেন বলে জানানো হয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে তার প্রস্তুতিও। কিন্তু ভ্যাকসিনের মূল্য নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই পুণের সেরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিনের যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা দেখে সকলেরই চোখ কপালে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই ফর্মুলার সবচেয়ে বেশি দাম ভারতেই। প্রতিটি ডোজের জন্য ৬০০ টাকা খরচ করতে হবে গ্রহীতাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যার দাম এর অর্ধেকেরও কম।
প্রথম দুই দফার ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির শেষে সরকার জানিয়েছে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মানুষদের প্রতিষেধক দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্র নেবে না। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাজ্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। রাজ্য সরকারগুলি আলাদাভাবে প্রতিষেধক কিনে তা বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থাও করেছে অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু জটিলতা তৈরি হয়েছে এর দাম নিয়ে। প্রথম দুই দফায় পিএম কেয়ার্স ফান্ডে যে প্রতিষেধক বিক্রি করা হয়েছে, তার মূল্য ছিল ১৫০ টাকা। তবে ১ মে থেকে এর দাম এক ধাক্কায় হতে চলেছে প্রতি ডোজে ৬০০ টাকা। এমনকি ভর্তুকির ২০০ টাকা বাদ দিলেও একজন গ্রহীতাকে খরচ করতে হবে ৪০০ টাকা। এই মূল্যও সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি।
আন্তর্জাতিক বাজারে একই ভ্যাকসিন বিক্রি হচ্ছে অর্ধেকেরও কম দামে। আমেরিকায় একটি ডোজের মূল্য ৪ ডলার। আর ভারতের ক্ষেত্রে তা ৮ ডলার। অর্থাৎ দ্বিগুণ দামে প্রতিষেধক কিনতে হবে ভারতীয়দের। ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে প্রতিষেধকের দাম ৩.৫ ডলারেরও কম। আরব এবং আফ্রিকার দেশগুলিতেও দাম ৫.২৫ ডলারের বেশি নয়। ব্রাজিলে প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে ৩.১৫ ডলারে। আর সবচেয়ে মজার বিষয়, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকেই বাংলাদেশ প্রতিষেধক কিনছে প্রতি ডোজ ৪ ডলারে। তাহলে ভারতের ক্ষেত্রে এর দাম এত বেশি কেন?
সেরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়, প্রতি ডোজ প্রতিষেধকে কোম্পানির মুনাফা হবে অন্তত ১৫০ টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মানুষ বিপর্যস্ত হলেও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির সংস্থাগুলি মুনাফা বাড়িয়েছে বেশ কয়েক গুণ। এই হিসাব গত বছরের শেষেই প্রকাশ পেয়েছিল। এবার প্রতিষেধক নিয়েও একইরকম বাণিজ্যিক মুনাফা লাভের হিসাব কষছে সেরাম ইনস্টিটিউট। অথচ কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এখনও এই বিতর্ক নিয়ে কোনো মন্তব্যই করা হয়নি। এমনকি কোনো কোম্পানি কত দামে প্রতিষেধক বিক্রি করবে, তার উপর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ রাখার দায়িত্বও অগ্রাহ্য করেছে কেন্দ্র। মানুষের জীবনের দামও কি তাহলে ব্যবসার হিসাবেই স্থির করা হবে? মহামারী পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের মনে তাই একটাই ভাবনা, ‘মানুষ বড়ো সস্তা।’
Powered by Froala Editor