গত বছরের অক্টোবর মাসের কথা। অনলাইন সাইট থেকে স্বল্পমূল্যে একটি ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্স (Ambulance) কিনেছিলেন তাঁরা। সঙ্গে নিয়েছিলেন বেশ কিছু ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, অক্সিজেন সিলিন্ডার। তারপর সেই অ্যাম্বুলেন্সে চেপেই নেমেছিলেন রাস্তায়। সেটাই বিগত এক বছর ধরে তাঁদের ঘর-বাড়ি। ইতিমধ্যেই ৫০টিরও বেশি দেশ পার হয়েছেন তাঁরা। তৈরি করেছেন দীর্ঘতম অ্যাম্বুলেন্স যাত্রার গিনেস বুক রেকর্ডও।
কথা হচ্ছে ডোডি এবং র্যাচেল নিক্সনকে (Dodi And Rachel Nixon) নিয়ে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে তাঁদের এই আশ্চর্য কর্মকাণ্ড। নজর কেড়েছে নেটিজেনদের। কিন্তু বিশ্বভ্রমণের জন্যও হঠাৎ অ্যাম্বুলেন্সই কেন?
সেটা ২০১৮ সাল। নিজেদের গাড়িতে চেপে বিশ্বভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন ডোডি ও র্যাচেল। সে-সময় থেকেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। তবে সাধারণ মারুতি গাড়িতে তো আর দিনের পর দিন রাত কাটানো যায় না। তাই বাধ্য ক্যাম্পার ভ্যান বা ক্যারাভ্যানের অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন তাঁরা। তবে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাজেট। সে-সময়ই বিষয়টা নজরে আসে তাঁদের। ওএলএক্স, ইবে— ইন্টারনেটে এধরনের একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে বিক্রি হয় ব্যবহৃত যানবাহন। সেখান থেকেই পুরনো গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেন নিক্সন দম্পতি। তবে ক্যারাভ্যান পাননি তাঁরা, বদলে পেয়েছিলেন একটি একটি অ্যাম্বুলেন্স। বেশ কম দামেই।
পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করার আরও একটি কারণ রয়েছে নিক্সন দম্পতির। ডোডি এবং র্যাচেল উভয়েই ভেটেরেনিয়ান অর্থাৎ পশু-চিকিৎসক। কাজেই অ্যাম্বুলেন্সের মাহাত্ম্য তাঁদের কাছে একটু অন্যরকম। পরিসংখ্যান বলছে, অন্যান্য জীবিকার তুলনায়, ভেটেরেনিয়ানরা প্রায় আড়াই গুণ বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ। এমনকি নিক্সন দম্পতির অনেক কাছের বন্ধুও আত্মহনন করেছেন স্রেফ আর্থিক অনটনের জন্য। ইউরোপজুড়ে এই ছবি বেশ প্রকট। তাই অ্যাম্বুলেন্সে চেপে বিশ্বভ্রমণের মধ্যে দিয়ে পশু-চিকিৎসকদের এ-সম্পর্কে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিক্সন দম্পতি।
২০১৯ সালের শেষের দিকে, অ্যাম্বুলেন্স সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক এই যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেও, এই অভিযানে বাধ সাধে মহামারী। গত বছর অক্টোবরে মহামারীর প্রকোপ খানিকটা কমার পরই রাস্তায় নামেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল পোষ্য সারমেয় সি। প্রথমে ইউরোপের ২৪টি দেশ, তারপর মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন নিক্সন দম্পতি। তবে গৃহযুদ্ধ এবং সীমান্তদ্বন্দ্বের জন্য মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অধরাই থেকে যায় তাঁদের।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিমানে করে সোজা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছান ডোডি ও র্যাচেল। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর পর এবার লাতিন আমেরিকার দিকেই এগোচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই ২৪ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রমের নজির গড়েছেন এই ব্রিটিশ দম্পতি। মজার বিষয় হল, বিশ্বভ্রমণে বেরলেও ছেদ পড়েনি তাঁদের সাধারণ কর্মজীবনে। যাত্রাপথে সহস্রাধিক পথ-সারমেয় এবং অন্যান্য পশুদের চিকিৎসা করে তৈরি করেছেন নতুন মাইলফলক। অন্ততপক্ষে আরও একবছর ধরে চলবে তাঁদের এই যাত্রাপথ। কাজেই এই পরিসংখ্যান আরও বৃদ্ধি পাবে আগামীতে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…
Powered by Froala Editor