দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল আরও একটা বড়োদিন। সকাল থেকেই উপহারের জন্য অপেক্ষা করে ছিল অসংখ্য শিশু। অবশ্য শুধু শিশুরাই নয়। বড়োদিনের উপহার পেতে বড়োদের আগ্রহও কম নয়। প্রতি বছর বিচিত্র উপহার কারোর ভাগ্যে জোটে, কারোর জোটে না। তবে আইসল্যান্ডের মানুষের কাছে বড়োদিনের উপহার মানেই বই। হ্যাঁ, দুই মলাটের মধ্যে সাদা কাগজের উপর কালো অক্ষরে ছাপা বই। আর এই বড়োদিনের সময়েই আইসল্যান্ডের মানুষ মেতে ওঠেন আরেক উৎসব, যার নাম ইয়ালোবোকাফ্লোট। অনুবাদে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘আইসল্যান্ড ক্রিসমাস বুক ফ্লাড’ বা আইসল্যান্ডের বড়োদিনের বইয়ের বন্যা।
শিক্ষিতের হারে পৃথিবীতে আইসল্যান্ডের স্থান তৃতীয়। স্বাভাবিকভাবেই এদেশের মানুষদের মধ্যে পড়াশোনার চর্চা অনেকটাই বেশি। বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আইসল্যান্ডের ৯৩ শতাংশ মানুষই সারা বছরে অন্তত একটি বই পড়ে শেষ করেন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশেই এই সংখ্যাটা ৮০ শতাংশের বেশি নয়। আর নাগরিকদের বই পড়ার এই অভ্যাসের সঙ্গে তাল মিলিয়েই বিগত ৮ দশক ধরে চলে আসছে এই বইয়ের উৎসব।
শুরুটা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুদ্ধের কারণে তখন আইসল্যান্ডের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ বন্ধ। আর অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের জন্য পড়ে আছে শুধু প্রচুর পরিমাণ কাগজ। সেই থেকেই শুরু বই ব্যবসার রমরমা। আর জনগণের মধ্যে বইকে জনপ্রিয় করে তুলতে প্রকাশকরা বেছে নিলেন ক্রিসমাসের সময়টাকেই। সরকারি ছুটির ঘোষণার সঙ্গে এল একটি ক্যাটালগ। আর সেই ক্যাটালগে সাজানো সম্প্রতি প্রকাশিত সমস্ত বইয়ের তালিকা।
আজও আইসল্যান্ডে বড়োদিনের ছুটি শুরু হয় বোকাটিডিন্ডি বা বইয়ের ক্যাটালগ দিয়েই। আর এই ক্যাটালগ হাতে আসার পরেই বইয়ের দোকানে ভিড় জমান মানুষ। কলকাতায় যেমন বইমেলা মানে নতুন নতুন বই মলাটবন্দি হওয়ার সময়, আইসল্যান্ডে তেমনই বড়োদিনের উৎসব। আর বড়োদিনের সন্ধ্যায় প্রায় প্রতিটা মানুষের সময় কেটে যায় নতুন বইয়ের পাতা উল্টে। পৃথিবীর প্রতিটা বইপ্রেমীর কাছেই এ এক স্বপ্নের ছুটি কাটানো। আর তাই তো ইউনেস্কো ২০১১ সালে আইসল্যান্ডকে বইপ্রেমীর দেশ বলে ঘোষণা করেছে। বরফে ঢাকা প্রকৃতির মাঝে এমন একটা দেশের অস্তিত্ব সত্যিই আশ্চর্যজনক।
আরও পড়ুন
কলকাতা বইমেলার প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নকশা, চত্বরজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দুষ্প্রাপ্য বই থেকে প্রাচীন পদক – দক্ষিণ কলকাতার এই দোকান যেন আদ্যিকালের সিন্দুক