আমফানের তাণ্ডবে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা কার্যত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে। প্রতিটা জায়গা থেকে খবর আসছে বিপর্যয়ের। ভেঙেছে অসংখ্য গাছপালা, মাটির বাড়ি। সর্বনাশের অন্যান্য নজিরও নেহাৎ কম নয়। এরই মধ্যে আরেক মর্মন্তুদ খবর। ঝড়ের প্রকোপে ভেঙে পড়েছে বনগাঁর যশোর রোডের শতাব্দীপ্রাচীন গাছগুলিও।
গত কয়েক বছর ধরেই ‘গাছ বাঁচাও আন্দোলন’-এর সূত্রে রাজ্যবাসীর কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল যশোর রোডের বিশালাকার গাছগুলি। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই। জল গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্তও। শেষ অবধি হাইকোর্ট গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ দেয় এবং বন্ধ হয় বৃক্ষনিধনের সম্ভাবনা। কিন্তু সেই জয়ের পরেও, আমফান যে এমন সর্বনাশ করবে, তা বোধহয় ভাবতে পারেননি কেউই।
যশোর রোডের দু-ধারে এখন শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন। শতাব্দীপ্রাচীন গাছগুলির মধ্যে অন্তত ৩০-৪০ শতাংশ উপড়ে গেছে ঝড়ে। কিছু গাছ চিরে গেছে মাঝখান থেকে। গাছের আঘাতে আশেপাশের দোকানগুলিও ধ্বংসপ্রায়। বনগাঁর বাসিন্দা তন্ময় দে-র কথাতেও উঠে এল বিভীষিকাময় সেই ছবি। প্রহরকে তিনি জানালেন – ‘যেসব গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো হয়তো কেটে ফেলতে হবে। সবজায়গায় পৌঁছনোও যায়নি এখনও। কিন্তু যেটুকু খবর পেয়েছি, চারদিকে ধ্বংসের ছবি। লাইটপোস্ট, ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে পড়েছে সর্বত্র। কলকাতার দিক থেকে বনগাঁ যাওয়ার পথে বনগাঁ পুর এলাকা যেখান থেকে শুরু হচ্ছে, সেখান থেকে বিএসএফ ক্যাম্প মোড় হয়ে প্রায় বর্ডার পর্যন্ত এলাকার অবস্থা বেশ খারাপ। গাছগুলোকে সরাতেও সময় লেগেছে দীর্ঘক্ষণ।’
শুধু গাছ নয়, গাছের মধ্যে যে-পাখিরা বাস করত, তারাও নাজেহাল। প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য পাখি। বাকিরা বাস্তুহারা। অন্যদিকে, বনগাঁ সাবডিভিশনের পরিস্থিতিও মর্মান্তিক। মাটিতে মিশে গেছে অজস্র কাঁচা বাড়ি। সব মিলিয়ে, আমফান যে বনগাঁয় স্থায়ী চিহ্ন রেখে গেল, তা বলাই বাহুল্য।
(ছবি - বিভিন্ন বনগাঁবাসীর সৌজন্যে প্রাপ্ত)