ঘরে পড়েছিল একটি তালাবন্ধ ব্রোঞ্জের বাক্স। পারিবারিক সূত্রে অনেকেরই হাতে ঘুরেছে, কিন্তু কেউই বাক্সটি খোলার চেষ্টা করেনি। অবশেষে গুপ্তধনের আশায় বাক্সটি খোলা হল। না, সোনা-দান কিছুই পাওয়া যায়নি। বদলে সেখানে ছিল কিছু কাগজ, আর একটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি। ‘প্যারিস ইন দ্য টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি’— লেখক জুল ভার্নের লেখা এই উপন্যাসটি শেষপর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৯০ বছর পরে প্রকাশিত হয়।
বিশ্ব সাহিত্যে জুল ভার্ন একটি কিংবদন্তি নাম। ‘ফাদার অফ সায়েন্স ফিকশন’-এর কাছ থেকে বহু স্মরণীয় উপন্যাস পেয়েছে সাহিত্যজগত। যেখান থেকে পরবর্তীকালে অনেক বিখ্যাত সিনেমা, নাটকও মঞ্চস্থ হয়েছে। সেইরকমই একটি উপন্যাস ‘প্যারিস ইন দ্য টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি’। বইটি ১৮৬৩ সালে লেখা হলেও, ভার্নের কল্পনায় যেন অবিকল ফুটে উঠেছে বর্তমান সময়ের কথা। বইতে রয়েছে এমন এক পৃথিবীর কথা, যা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত। রয়েছে মেট্রো, শপিং মল, ক্যাব। ইলেকট্রিক লাইট, ইলেকট্রিক চেয়ার, রিমোট কন্ট্রোল, হাই-স্পিড ট্রেন ইত্যাদির কথাও আছে উপন্যাসে। কিন্তু এতসব করতে গিয়ে বইয়ের দিকে আর কারোর আগ্রহ নেই। এইরকম পরিবেশেই একটি ছেলের বেঁচে থাকার গল্প বলে বইটি। আজকের চারপাশের সঙ্গে আশ্চর্য মিল না? উপন্যাসটিতেও জুল ভার্ন কল্পনা করেছিলেন ১৯৬০ সালের কথাই।
অথচ এই বইটিই দীর্ঘ বহু বছর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। লেখার পর, বাক্সের ভেতরেই রেখে দিয়েছিলেন পাণ্ডুলিপি। মনে করা হয়, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিলেন পিয়ের-জুল হেটজেল। উনবিংশ শতকের অন্যতম বিখ্যাত এই প্রকাশক জুল ভার্নের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ভার্নের অনেক বইও তিনিই ছাপিয়েছিলেন। তিনিই এই ‘অবাস্তব’ বই ছাপতে নিষেধ করেছিলেন তাঁকে। আর সেই জন্যই বাক্সবন্দি হয়েই থেকে যায় প্রায় ৯০ বছর। জুল ভার্নের চতুর্থ প্রজন্ম জিন জুলভার্ন খুঁজে পান এই পাণ্ডুলিপি। পরে, ১৯৯৪ সালে ফ্রান্সে প্রথমবার প্রকাশিত হয় ‘প্যারিস ইন দ্য টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি’। ঠিক দুই বছর পর, ১৯৯৬ সালে ইংরেজিতেও অনুবাদ করা হয় বইটি।
ঋণ – এই সময়, অনিরুদ্ধ সরকার