একসময় আকাশের বুকে পণ্য নিয়ে উড়ে যেত অসংখ্য বোয়িং বিমান। তার বিরাট আয়তনের আকর্ষণীয় চেহারা মুগ্ধ করত অনেককেই। বিশেষ করে বোয়িং ৭৪৭ বিমান, যাকে ‘আকাশের রানি’ বলা হত। তারপর প্রযুক্তির জগতে অনেক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। চার সিলিন্ডারের জেট বিমানের পরিবর্তে এসেছে অনেক অত্যাধুনিক হাল্কা মডেল। কিন্তু কথায় বলে, মরা হাতির দাম লাখ টাকা। করোনা মহামারীর মুহূর্তে যেন সেই কথাটাই আবার প্রমাণিত হল। আকাশের বুকে নিঃসঙ্গ যোদ্ধার মতো আবারও দেখা গেল বোয়িং ৭৪৭। ঠিক যেন মধ্যযুগের ইউরোপের এক নাইট।
অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতোই বিমান পরিবহনের উপর থাবা বসিয়েছে করোনা ভাইরাস। সংক্রমণের কারণে অথবা নিরাপত্তার খাতিরে, কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন অনেক পাইলট। অথচ এর মধ্যেই দায়িত্ব এসে পড়েছে বিভিন্ন ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন করার। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বিমান তখন কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়েছে। এমন সময়ে আবারও ভরসা হয়ে উঠল সেই বিশাল আয়তনের বোয়িং বিমান।
বোয়িং বিমানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই মহামারীর সময়ে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর বিশাল আয়তনের জন্য অনেক বেশি পণ্য পরিবহন তো সহজ হয়েছেই, সেইসঙ্গে এর তিনটি উষ্ণতা নিয়ন্ত্রিত চেম্বারে বিভিন্ন ওষুধ পরিবহন অনেক বেশি নিরাপদ। তাই ওষুধ পরিবহনের ক্ষেত্রে এই বোয়িং বিমানের উপরেই ভরসা রাখছেন কোম্পানিগুলি।
পৃথিবীর আকাশে এখনও ১৬টি বোয়িং ৭৪৭ বিমান উড়তে দেখা যায়। তবে তাদেরও দিন শেষ হয়ে এসেছে। আধুনিক মডেলের সস্তা বিমান এসে তাদের জায়গা দখল করবে। কিন্তু এই শেষ সময়েও নিজের কাজ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে গেল এই বিমান। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও আকাশে দুটি বোয়িং বিমান উড়তে দেখা গিয়েছে। আর এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে বিদায়ের মুহূর্তে নিজের ঐতিহ্যের প্রমাণ দিতে পেরে বোয়িং কি খানিকটা গর্বিত মনে করছে নিজেকে? অবশ্য সে তো মানুষ নয়। সামান্য যন্ত্র মাত্র।