বুধবার দুপুরবেলা, স্থলভাগে তখনও আছড়ে পড়েনি বিধ্বংসী আমফান। তখনও ব্রেবোর্ন রোড গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যেত প্রাচীন গির্জার মাথার উপর দাঁড়িয়ে একটি সাদা মিনার। বাতাসের অভিমুখের সঙ্গে নিয়মিত অভিমুখ পরিবর্তন করছে এই মিনার। সেইসঙ্গে যেন বহু প্রাচীন ইতিহাসেরও দিক নির্দেশ করছে। তারপর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। ঝড়ের দাপটে লণ্ডভণ্ড দক্ষিণবঙ্গ। আর কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না সেই বায়ুনির্দেশক মিনারকে। যেন মুকুটহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেন্ট অ্যান্ড্রু'জ চার্চ।
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে মার্কাস অফ হেস্টিংসের অর্থানুকূল্যে নির্মিত হয় এই গির্জাটি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমস্ত স্কটিশ প্রেসবাইটেরিয়ান কর্মচারীদের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়। সেই শুরুর দিন থেকেই গির্জার মাথার উপর মুকুটের মতো ছিল এই বায়ুনির্দেশক মিনারটি। ওজন এটি ১০০ কিলোগ্রামেরও বেশি। এই ২১৫ বছরে অসংখ্য ঝড়, ভূমিকম্পের সাক্ষী থেকেছে এই মিনার। কিন্তু কিছুতেই তার কোনো ক্ষতি হয়নি। অথচ আমফানের তাণ্ডবে আর তার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া গেল না।
ঝড়ের সময় গির্জার সকল আবাসিক ঘরের মধ্যে নিরাপদ অবস্থায় ছিলেন। ঝড় থামলে বেরিয়ে এসে প্রথমে দেখেন গির্জা চত্বরের তিনটি প্রাচীন গাছ ভেঙে পড়েছে। বাগান লণ্ডভণ্ড। এরপরেই সকলের চোখ যায় উপরদিকে। আর তখনই নজরে আসে মিনারের অনুপস্থিতি। সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটি ছোটো টুকরো ছাড়া আর কোনো চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায়নি, জানাচ্ছেন গির্জার রেভারেন্ড ফাদার স্বরূপ বর।
দক্ষিণবঙ্গের ইতিহাসে বিধ্বংসী ঝড় কোনো নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু আমফানের মতো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ইতিপূর্বে ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। ঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত বহু মানুষের জীবন। অবশ্য আগে থেকে সতর্কতা নেওয়ার ফলে সেইসব ক্ষতি অনেকটাই আটকানো গিয়েছে। কিন্তু নানা প্রাচীন সৌধের উপর নিজের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছে আমফান। শিবপুরের বুড়ো বটগাছ বা সেন্ট অ্যান্ড্রু'জ চার্চের মিনার, কোনোটাই আর ফিরে আসবে না কোনোদিন।
Powered by Froala Editor