খেলা— এই শব্দটা শুনলে অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়ে। টিভির সামনে বা স্টেডিয়ামে বসেই হোক, বা নিজেই মাঠে নেমে পড়া; খেলাপাগল মানুষদের অভাব আছে নাকি! জায়গা একটা খুঁজে পেলেই হল। কিন্তু যদি বলি, চলুন চাঁদে গিয়ে একটু খেলে আসা যাক? এবার সত্যিকারের পাগল ভাবতে শুরু করেছেন নিশ্চয়ই! না, ঘাবড়াবেন না। চাঁদে মানুষও যেমন পৌঁছেছে, তেমনই পৌঁছেছে খেলাও। মহাকাশে গিয়ে রীতিমতো গলফ্ও খেলে এসেছেন বিজ্ঞানীরা…
আরেকটু বিস্তারে বলা যাক। ১৯৭১ সাল। বছর কয়েক আগেই নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিনরা চাঁদ থেকে ঘুরে এসেছেন। একটু একটু করে ডানা মেলছে মহাকাশ গবেষণা। অ্যাপোলো ১১-র পর এসেছে অ্যাপোলো-১৩। এবার পালা ১৪-র। আর সেই অভিযানেই অংশ নিলেন অ্যালান শেপার্ড। এর আগেও তিনি মহাকাশ থেকে ঘুরে এসেছেন। বলা ভালো, অ্যালানই প্রথম আমেরিকান, যিনি মহাকাশে গিয়েছিলেন। কিন্তু চাঁদে যে নামা হয়নি! অ্যাপোলো-১৪ তাঁর কাছে সেই সুযোগ নিয়ে এল। শুরু হল প্রস্তুতি…
১৯৭১-এর জানুয়ারিতেই চাঁদের দিকে রওনা দিল ‘অ্যাপোলো-১৪’। প্রথমেই বেশ কয়েকটা রেকর্ড তৈরি করে ফেলল এই অভিযানটি। এটিই প্রথম মহাকাশযাত্রা যেটা রঙিন টিভিতে সম্প্রচার করা হয়েছিল। এবং অ্যালান শেপার্ড হলেন বৃদ্ধতম মহাকাশচারী, যিনি চাঁদে হেঁটেছেন। অবশ্য তখন তিনি মোটে ৪৭। তবে আসল ঘটনা এখনও বাকি আছে…
চাঁদে নেমেই অ্যালানের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। আচ্ছা, চাঁদেও কি গলফ্ খেলা যাবে? কিন্তু চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তো খুবই কম! তাও দেখাই যাক না। এই বলে ওই ভারী স্পেসশ্যুটেই ধরলেন গলফের ক্লাব। এক হাতেই ঘোরালেন সেই স্টিক। এবং সঙ্গে সঙ্গে দু’দুটো সাদা গলফের বল চলে গেল দূরে। রবীন্দ্রনাথের ওই গানটার মতো, ‘দূরে কোথাও দূরে দূরে’… পরবর্তীকালে অ্যালান শেপার্ডও বলেছিলেন, বল দুটো অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু ঠিক কতটা দূরে?
বহুদিন পর্যন্ত এই বিষয়টা রহস্যই ছিল। শেষমেশ ২০১০ সালে ইথান সিগল নামের এক পদার্থবিদ রীতিমতো অঙ্ক কষে একটা ধারণা তৈরি করলেন। তিনি বললেন, মহাকাশে অন্তত ৪০০০ মিটার অবধি গেছে গলফ্ বল! যা কিনা গলফের ইতিহাসে সর্বাধিক দূরত্ব! নিশ্চয়ই আপনার মনে আরও একটা কথা চলে এসেছে। বলটা তো কেউ নিয়ে আসেনি মহাকাশ থেকে। তাহলে কি এখনও মহাকাশেই ভেসে আসে গলফ্ বল দুটো? একদিন মহাকাশে গিয়ে কেউ হয়তো খুঁজেও পাবে সেই বল!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চাঁদের জন্ম কীভাবে? প্রচলিত ধারণা বদলে দিল সুপার কম্পিউটার