এ যেন চলে গিয়ে আবার ফিরে আসা— প্রত্যাবর্তন! আজ থেকে এক শতাব্দীরও বেশি আগে দেখা গিয়েছিল একে। তারপর একদম নিরুদ্দেশ হয়ে যায়; অনেক খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। অনেকে ভেবেছিলেন বোধহয় মারাই গেছে এরা, বা বিলুপ্তই হয়ে গেছে। সবাইকে অবাক করে আবার আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে আসাম কিলব্যাক প্রজাতির সাপ। যা নিয়ে রীতিমতো উৎসাহিত বিজ্ঞানীরা।
অ্যাডভেঞ্চারের শুরু হয়ে ছিল প্রায় ১২৯ বছর আগে। ১৮৯১ সালে স্যামুয়েল এডওয়ার্ড পিল নামের এক ব্রিটিশ চা ব্যবসায়ী এই সাপের সন্ধান পান। পরবর্তীতে এর যাবতীয় তথ্য নথিবদ্ধ করে রাখেন প্রাণীবিদ লিউটলে স্ক্ল্যাটার। আসামের ঘন সবুজ অরণ্যের ভেতরেই এই সাপের বাস। বেশ ভারিক্কি নাম হলেও, আদতে এই সাপের প্রজাতিটি বিষহীন। বাদামি দেহের ওপর সোনালি ছাপ— দেখতেও বেশ। কিন্তু ১৮৯১ সালের পর আর সেরকমভাবে দেখা যায়নি আসাম কিলব্যাককে। একসময় নিরুদ্দেশই হয়ে যায় এরা। প্রাণীবিদদের নজরে পড়তেই শুরু হয় খোঁজ। সেই ১৯১১-১২ সাল থেকে এই সাপের খোঁজে বারবার বন জঙ্গলে ছুটেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু হা হতোস্মি! কিছুই পাওয়া যায়নি…
২০১৮ সালে পাঁচজন বিজ্ঞানীর একটি দল আসামের জঙ্গলে যান সাপের খোঁজে। বেশ কিছু নতুন জীবজন্তুরও সন্ধান পান। সেইসঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে সন্ধান পান আসাম কিলব্যাকের! প্রায় ১২৯ বছর পর সামনে এল এই সাপ। যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো উৎসাহী। কিন্তু কেন ১০০ বছরেরও বেশি সময় সামনে আসেনি এরা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে পাহাড়ের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন। বিগত ১০০ বছরে অনেক কিছু বদলেছে সেখানে। জঙ্গলের পর জঙ্গল কেটে চাষের জমি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে চা-বাগানও। ফলে নিজের পুরনো পরিবেশ হারিয়ে ফেলে আসাম কিলব্যাক। আস্তে আস্তে সরতে শুরু করে। এমনকি, ২০১৮-তে অরুণাচল-আসাম সীমান্তের কাছের জঙ্গলে পাওয়া যায় এই সাপ। আর এর জন্য দায়ী আমাদের ক্রিয়াকলাপ। এমনিতেই সাপটি ছোটখাটো; পাহাড়ের জঙ্গল হারিয়ে গেলে এরাও হারিয়ে যাবে একসময়। যত শীঘ্র সম্ভব এই প্রাণীটির সংরক্ষণ করতে হবে, এমন কথাই বলছেন প্রাণীবিদরা। নয়তো আবারও হারিয়ে যেতে পারে এরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এক দশক পর যমুনায় ফিরল ঘড়িয়াল, বিপন্ন প্রজাতির দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা