টেবিলের ওপর সার দিয়ে সাজানো রয়েছে বেশ কিছু চিনামাটির মূর্তি। কোনোটির আকার সামুদ্রিক ঝিনুকের মতো, কোনোটা দেখতে যেন হুবহু অক্টোপাস কিংবা মানুষের হৃদযন্ত্র। তাছাড়া বিচিত্র নানান প্রাণীর প্রতিকৃতিও রয়েছে। পৃথিবীতে নয়, বরং এসব প্রাণীদের দেখা মেলে মূলত কমিকস বই কিংবা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসে। কী ভাবছেন? এসব নিছকই শোপিস? না, একেবারেই নয়। আদতে এই সবকিছুই বাদ্যযন্ত্র (Musical Instrument)।
হ্যাঁ, অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। আর এইসকল ‘ভিনগ্রহী’ বাদ্যযন্ত্ররা প্রাণ পেয়েছে ফ্লোরিডাবাসী মার্কিন শিল্পী সিন ডাফির (Sean Duffy) তত্ত্বাবধানে। বিগত ১৫ বছর ধরে ফ্লোরিডার স্টুডিও-তে তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন নিত্যনতুন বাদ্যযন্ত্রের ওপর। তাঁর এই কর্মকাণ্ডকে গবেষণাও বলা চলে। কিন্তু বাদ্যযন্ত্রদের এমন অদ্ভুত আকার দেওয়ার কারণ কী?
একটু ভালো করে দেখলেই বোঝা যাবে, ডাফির তৈরি সমস্ত বাদ্যযন্ত্রই নির্মিত হয়েছে চিনামাটি বা সেরামিক দিয়ে। ডাফির বিশ্বাস, মানুষ সঙ্গীত তৈরি করে ঠিকই, তবে প্রকৃতির মধ্যেও এক নিজস্ব সুর আছে, ছন্দ আছে। মাটিতে বৃষ্টি কিংবা উপকূলে আহরহ সমুদ্রের ঢেউয়ের আছড়ে পড়লেও তৈরি হয় সঙ্গীত। সঙ্গীতের সঙ্গে প্রকৃতির এই যোগসূত্রকেই বাদ্যযন্ত্রের প্রতিফলিত করার চেষ্টা করে চলেছেন মার্কিন সেরামিক শিল্পী। কাঠ, ফাইবার কিংবা চামড়ার ব্যবহার না করেই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই তৈরি করছেন বাদ্যযন্ত্র। মূলত সেরামিকের ব্যবহারে নানান ধরনের বাঁশিই তৈরি করেন ডাফি। কোনোটা বাঁশের তৈরি বাঁশি মতো একনলী আবার কোনোটার মধ্যে রয়েছে একাধিক অ্যাকোয়াস্টিক চেম্বার বা শব্দকক্ষ। তাছাড়াও বিভিন্ন রকমের জলতরঙ্গের মতো বাদ্যযন্ত্রও তৈরি করেছেন তিনি সেরামিক দিয়ে।
আশ্চর্যের বিষয়, আজ থেকে ১৫ বছর আগে তাঁর এই বিচিত্র কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল একটি কম্পিউটার ভিডিও গেম থেকে। ‘দ্য লেজেন্ডস অফ জেল্ডা’ সিরিজের গেমে প্রথম মাটির তৈরি অদ্ভুত ধরনের ব্লোয়িং ইনস্ট্রুমেন্ট দেখেন তিনি। এই বাদ্যযন্ত্রই অনুপ্রাণিত করে তাঁকে। পড়াশোনা শুরু করেন সঙ্গীত নিয়ে। তারপর নিজের ভাস্কর্যশৈলীর সঙ্গে মেলবন্ধন করান সুরের।
আরও পড়ুন
বাদ্যযন্ত্রের বদলে বন্দুক তুলে নিচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফামো শিল্পীরা
তবে শুধু ডাফির এই অদ্ভুতদর্শন বাঁশির বিচিত্র আকার-আকৃতিই নয়, এই বাঁশির আওয়াজও রীতিমতো মুগ্ধ করবে যে-কোনো শ্রোতাকে। সাধারণ কাঠের বাঁশির মতো তার শব্দ তীক্ষ্ণ নয়, বরং অনেক কোমল। আর তা হবে না-ই বা কেন? তাতে যে প্রকৃতির স্পর্শ লেগে আছে…
আরও পড়ুন
জিআই ট্যাগ পেল কাশ্মীরের কার্পেট, ভাগ্য বদলাবে শিল্পীদের?
Powered by Froala Editor