৩০ বছর ধরে আঁকা ছবি, অবশেষে প্রকাশ্যে শিল্পীর সৃষ্টি

আশির দশকের শেষদিকে ক্যানভাসটিতে প্রথম তুলি ছুঁইয়েছিলেন শিল্পী। তারপর দেখতে দেখতে ৩ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রঙে ভরে উঠেছে ক্যানভাস। তবু ছবি যেন সম্পূর্ণ হয় না কিছুতেই। এখনও তাতে অনেক ছাপ পড়া বাকি। এমনটাই মনে হতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) শিল্পী মায়োঙ্গি কাং-এর (Myonghi Kang)। তবে অবশেষে ছবিটি প্রদর্শনীতে স্থান পেল। হংকং শহরে ভিলেপিন গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। তবে এখনও যেন ছবিটা সম্পূর্ণ হয়নি, মনে করছেন কাং।

আসলে কয়েক মুহূর্তে একটি ছবি এঁকে ফেলায় বিশ্বাস করেন না কাং। তাঁর প্রতিটা ছবিই তৈরি হয় বছরের পর বছর সময় নিয়ে। তবে ‘লে টেম্পস ডেস ক্যামেলিয়া’ বা ক্যামিলার সময় নামক ছবিটি তৈরি হতে যত সময় লেগেছে, এমনটা বোধহয় আর কোনো ছবিতেই লাগেনি। প্যারিসে থাকার সময় প্রথম ছবিটির কাজ শুরু করেন তিনি। তখন তাঁর ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিল ক্যামেলিয়া ফুলের গাছ। সেই দৃশ্যকেই ক্যানভাসে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন কাং। তবে কেবল একটি মুহূর্তকে ক্যানভাসে বন্দি করতে চান না তিনি। বরং জীবন্ত ক্যামেলিয়া ফুলগুলির মধ্যে সারাক্ষণ যে প্রাণের স্পন্দন চলছে, তাই তাঁর বিষয়। কখনও সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠছে ফুল, আবার সময়ের নিয়মে তা শুকিয়েও যাচ্ছে। আবার ঝরে যাওয়া ফুলের জায়গা নিচ্ছে নতুন ফুল। এভাবেই এগিয়ে চলেছে জীবন।

একসময় প্যারিস ছেড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে চলে এলেন কাং। তখন ২০০৭ সাল। একবার ভেবেছিলেন, সেই ঘর থেকে চলে এসেছেন যখন তখন ছবিটাও এবার সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু জেজু দ্বীপের প্রাকৃতিক দৃশ্য আবারও তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল সেই পুরনো ক্যানভাসের কাছে। আসলে কাং ছবির মধ্যে সময়কেই ধরতে চান। তবে এমনটা দাবি করতে যে আত্মবিশ্বাস লাগে, তা তাঁর নেই বলেই জানিয়েছেন। বরং তিনি বলতে চান, ছবি আঁকার সময় তিনি সময়ের প্রভাব মেনে চলেন। তাঁর মতে, আমরা প্রকৃতি বলতে যতটুকু বুঝি, প্রকৃতির ব্যাপ্তি তার চেয়ে অনেক বেশি। প্রকৃতি মানে তো শুধু ঘাস, ফুল আর গাছ নয়। প্রকৃতি মানে সবই, এমনকি মানুষও। আর এই সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে যায় সময়। তাই একটি মুহূর্তে যেন কিছুই সম্পূর্ণ হয় না। সময় এগিয়ে চলে। শিল্পেও সময়ের ছাপ পড়তে থাকে। আদৌ কোনোদিনই তা সম্পূর্ণ হয় কি?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
একটিও ছবি বিক্রি না করেই ১০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক এই শিল্পী!