বৃহস্পতিবার সকালেই রওয়ানা হয়ে গিয়েছে প্রতিমা। ৪০/১, বনমালি স্ট্রিটের বাড়িটা তাই আজ কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সময়ের হিসাব যেন হারিয়ে গিয়েছে কবেই। “উত্তমকুমার মহানায়ক হয়ে ওঠার আগে থেকেই তাঁর বাড়ির লক্ষ্মীপ্রতিমা তৈরি করে আসছেন জ্যাঠা নিরঞ্জন পাল।” বলছিলেন বর্তমান শিল্পী জয়ন্ত পাল। আজ উত্তমকুমার বা তাঁর স্ত্রী গৌরীদেবী কেউই বেঁচে নেই। কিন্তু মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মীপুজো বলেই মনে রেখেছেন সকলে।
প্রহরকে জয়ন্ত পাল বলছিলেন, “আমার জ্যাঠা নিরঞ্জন পাল নানা পুজোর প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি টালিগঞ্জ পারায় শেডের কাজও করতেন। তখনই তাঁর তৈরি একটি যদুভট্ট মূর্তি দেখে মনে ধরে উত্তমকুমারের। সঙ্গে সঙ্গে বায়না করেন নিজের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার জন্য।” এই যদুভট্ট মূর্তি আসলে একধরনের সরস্বতী মূর্তি। পুরোটা ব্যাখ্যা করে বলা মুশকিল, বললেন জয়ন্ত পাল। তবে এই বায়না দেওয়ার পিছনে একটা শর্ত ছিল মহানায়কের। প্রতিমার মুখ হবে একেবারে স্ত্রী গৌরীদেবীর মুখের আদলে। সেই শর্ত মেনেই, ১৯৫০ সাল থেকে বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো শুরু করেন উত্তম।
মহানায়কের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা ফিসফাস আজও শোনা যায় সিনেমার জগতে। তাঁর আর গৌরীদবীর দাম্পত্য জীবন শেষ পর্যন্ত সুখের হয়নি। কিন্তু পরিবারের প্রতিমার মুখের আদল বদলায়নি এই কয়েক বছরে। জয়ন্ত পাল বলছিলেন, “এক ঝলক দেখেই সেই মুখ তুলে নিয়েছিলেন জ্যাঠামশাই। আর আজও প্রতিমা তৈরির আগে তাই আগের বছরের প্রতিমার কথা মনে করে আদল তৈরি করি।” নিরঞ্জন পাল তাঁর মৃত্যুর আগেই ভাইপোর হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে যান। আজ ২৪ বছর ধরে সেই কাজ করে আসছেন জয়ন্ত পাল।
প্রতি বছর প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হলে ভবানীপুরের বাড়ি থেকে আসে তাঁতের শাড়ি। তারপর বাড়িতে পৌঁছে সেই শাড়ি বদলে পরানো হয় বেনারসী। আগে পুরো সময়টায় উপস্থিত থাকতেন জয়ন্ত পাল। এখন আর কাজের চাপে পেরে ওঠেন না। সেটা তাঁর আক্ষেপ। পুজো হয়ে গেলে নিরঞ্জনের সময় আবারও তাঁতের শাড়ি পরেই বিদায় নেন মা লক্ষ্মী। নাকি তার মধ্যেই কোথাও আজও বেঁচে আছেন গৌরী চট্টোপাধ্যায়? যাঁর সবরকমের প্রশ্রয় পেয়েছেন বলেই গানের মাস্টার অরুণ চট্টোপাধ্যায় হয়ে উঠেছিলেন উত্তমকুমার! মানুষের জীবন যেন এভাবেই ধরা থাকে টুকরো টুকরো গল্পের মধ্যে। আর সেই গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে যায় ইতিহাসও।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
উত্তমকুমারের ডামি হিসেবে রাজাদাকে খুঁজে পাননি চলচ্চিত্র-নির্মাতারা