চলচ্ছক্তিহীন পশুদের ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফেরাতে হাতিয়ার প্রস্থেটিকস

গলার কাছে বেল্ট দিয়ে বেঁধে রাখা চাকার ওপর ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে হাঁস। আবার কখনো ছোট্ট ঠেলাগাড়িতে চেপে নিজেই ঘুরে বেড়াচ্ছে পোষ্য সারমেয়। একই ছবি ধরা পড়বে বেড়াল, কচ্ছপ, কাঠবেড়ালি, হরিণ, উট কিংবা গরুর ক্ষেত্রেও। আর তাদের মধ্যে মিল হল— তারা প্রত্যেকেই প্রতিবন্ধী। আমেরিকার টেলিভিশন শো ‘উইজার্ড ইন প’স’-এর কথাই হচ্ছে। চলচ্ছক্তিহীন প্রাণীদের প্রস্থেটিকস আর অর্থোটিক্সের মাধ্যমেই নতুন জীবনদান করেন এই শো-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ডেরিক ক্যাম্পানা। তবে ডেরিক কোনো কাল্পনিক চরিত্র নন। কাল্পনিক নয় তাঁর শো-তে হাজির হওয়ার পোষ্যরাও।

হিউ লফটিং-এর ‘ডুলিটল’ চরিত্রটার কথা মনে আছে? যিনি অনায়াসেই সারিয়ে তুলতে পারতেন যে কোনো পশুপাখিকে? ডেরিক ক্যাম্পানা হলেন বাস্তবের ডুলিটল। পক্ষাঘাতগ্রস্ত প্রাণীদের চলাচলে সক্ষম করতে একের পর এক ডিভাইস তৈরি করে চলেছেন এই মার্কিন উদ্ভাবক। আর তাঁর রোগীদের তালিকায় রয়েছে কাঠবেড়ালি থেকে শুরু করে হাতি পর্যন্ত সমস্ত প্রাণীই।

২০০৫ সাল প্রথম এই উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নামেন ক্যাম্পানা। প্রস্থেটিকসের মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসা সম্ভব হলে, পশুরাই বা ব্রাত্য থাকবে কেন? এই চিন্তাভাবনা থেকেই শুরু হয় মার্কিন মিলিয়নেয়ারের একক লড়াই। প্রথমে ব্যক্তিগত অর্থ বিনিয়োগ করেই এহেন ‘চিকিৎসা’ চালাতেন ক্যাম্পানা। খুলে ফেলেছিলেন আস্ত এক ‘ডাক্তারখানা। নাম ‘উইজার্ড অফ প’স’। তবে এমন এক ব্যয়বহুল উদ্যোগকে একা টেনে নিয়ে যাওয়া যে অসম্ভব। ফলত, শুরু হল সাধারণের থেকে সাহায্যের জোগাড় করা। তারপর টেলিভিশন শো। 

বর্তমানে অক্লান্তভাবেই সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ক্যাম্পানা। ভার্জিনিয়ায় নিজের বাড়িতেই তৈরি করে ফেলেছেন প্রস্থেটিক অঙ্গের ম্যানুফ্যাকচারিং বেস। পোষ্যদের চলচ্ছক্তি ফেরাতে নিত্যনতুন পন্থাও উদ্ভাবন করে চলেছেন তিনি। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও সবটা কাজই তাঁকে করতে হত নিজ হাতে। ফলে সময় লাগত অনেকটাই। এখন থ্রি-ডি প্রিন্টিং-এর প্রযুক্তি চলে আসায় আরও গতি বেড়েছে উৎপাদনে। বর্তমানে শুধু আমেরিকাই নয়, গোটা বিশ্বেই পোষ্যদের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত এই প্রস্থেটিক অঙ্গ সরবরাহ করেন ক্যাম্পানা। লক্ষ্য, পৃথিবীর সমস্ত অবলা জীবকে পক্ষাঘাতের যন্ত্রণামুক্ত করা। 

আরও পড়ুন
সুন্দরবনে নতুন অঙ্গুরিমাল প্রাণী আবিষ্কার প্রেসিডেন্সির গবেষকদের

তবে এমন মহৎ কাজেও বাধা এসেছিল একেবারে শুরুর দিক থেকেই। অনেক ভেটেরেনারি চিকিৎসকই বিরোধিতা করেছিলেন ক্যাম্পানার। প্রস্থেটিকস যে অসুস্থতার কোনো সমাধান হতে পারে না— এমনটাই বক্তব্য ছিল তাঁদের। কিন্তু ক্যাম্পানার একের পর এক সাফল্যে ধীরে ধীরে বদলেছে সেই ধারণা। পশুদের চিকিৎসার পাশাপাশি বর্তমানে ‘ভেট’ ডাক্তারদের সচেতন করার জন্য নিয়মিত কর্মশালারও আয়োজন করে চলেছেন মার্কিন উদ্ভাবক। কোনোরকম স্বার্থ ছাড়াই। ইন্টারনেটের ভাষায় ক্যাম্পানার এই উদ্যোগ এক কথায় ‘প’সাম’-ই বটে…

আরও পড়ুন
পোষ্য প্রাণীদের দূরে সরিয়ে দেবেন না, আগলে রাখুন মহামারীতেও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
উটেদের জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল, প্রাণী সুরক্ষায় পথ দেখাচ্ছে চিন

More From Author See More