“কেষ্টর কাকিমা কুসুমকলি, কঠিন কণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে কনফারেন্সের কবিদের কইলেন, কবিগণ কর্ণপাত করুন, কর্ণপাত করুন কবিগণ, কেষ্ট কথা কইবে না, কুপোকাত করেছে কেষ্ট, কেষ্ট করুণাময়ীর কাছে কাল কাটাচ্ছে, করুণাময়ীর কাছে কাল কাটালে কেউ কখনো কথা কয় না…”
উপরের স্তবকটি পড়েই অবাক হচ্ছেন বুঝি? অবাক হয়ে ভাবছেন প্রতিটি শব্দ ‘ক’ দিয়ে শুরু হওয়ার পরেও কীভাবে এত সাবলীল পুরো ভাবপ্রকাশ? না, এখানেই অবাক হওয়া শেষ নয়। কারণ এটি একটি সমগ্র বইয়ের অংশ মাত্র। গোটা বইটিই লেখা হয়েছে ঠিক এই পদ্ধতিতেই। অর্থাৎ সমগ্র বইটিরই সমস্ত শব্দ শুরু প্রথম ব্যঞ্জন বর্ণ ‘ক’ দিয়েই। আর এই বিস্ময়কর কাজটির নেপথ্যে রয়েছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের লেখক নাজিমুল কবির ইকবাল।
ছোট্ট একটি স্তবক পড়েই বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, কতটা কঠিন এই কাজ। তবে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসাবেই এই পরীক্ষামূলক সাহিত্যরচনা করেছেন কবির ইকবাল। আর এর পিছনে রয়েছে বিগত আড়াই দশকের কঠোর সাধনা। এমনকি কখনো একটিমাত্র উপযুক্ত শব্দের অনুসন্ধানে তাঁকে আটমাস ঘুরতে হয়েছে লাইব্রেরি লাইব্রেরি।
‘কেষ্ট কবি’, ‘কেষ্ট কবির কনফারেন্স’, ‘কেষ্ট কবির কষ্টগুলি’— সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এই তিনটি বই লিখেছেন বাংলাদেশের এই লেখক। তিনটিতেই ধরা দিয়েছে শব্দের এমন অলংকারের ঝংকার। তবে সবগুলি বই-ই লিখেছেন ইসমোনাক ছদ্মনামে। যথাক্রমে ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৬ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল বই তিনটি। বলাই বাহুল্য, অভিনব এই সাহিত্য নজর কেড়েছিল পাঠকদের।
আরও পড়ুন
প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক হিসাবে জাঁ-জ্যাকস রুশো ফেলোশিপ পেলেন বাংলার মনোরঞ্জন ব্যাপারী
কোনো একটি বর্ণ দিয়েই প্রতিটি শব্দ নির্মাণ করে সম্পূর্ণ বই লেখার চিন্তাভাবনা থাকলেও, প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো বর্ণের পরিকল্পনা ছিল না। তবে ‘ক’-কেই বেছে নেন তিনি। কারণ, বাংলা শব্দভাণ্ডারে ‘ক’ দিয়েই রয়েছে সবথেকে বেশি সংখ্যক শব্দ। তিনটি বই-ই মূলত একটিই বৃহত্তর গল্পের তিনটি খণ্ড বা পর্ব। ট্রিলজিই ধরে নিতে পারেন। আর তিনটি বই মিলিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৭ হাজার শব্দ। ‘কেষ্ট কবি’ চরিত্রটির মধ্য দিয়েই তিনি তুলে এনেছেন সাধারণ মানুষের দৈনিক জীবনের কষ্ট, যন্ত্রণা, হাসি-কান্না অভিব্যক্তি।
বাংলা তো বটেই, অন্য কোনো ভাষাতেও এমন অভিনব সাহিত্য এর আগে রচনা হয়েছে কিনা বলা দুষ্কর। বাংলা ভাষাকে এমন অভিনবভাবে সমৃদ্ধ করার পর এখন লেখক ইসমোনাকের লক্ষ্য গিনেস বুক রেকর্ডের স্বীকৃতি। কারণ সেই স্বীকৃতি মিললে তবেই বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নিতে পারবে বাংলা ভাষা। তবে সেই বিষয়ে প্রযুক্তিগত ধারণা না থাকায় এখনও পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি। তবে আগামী দিনে সেই লক্ষ্য স্পর্শ করবেন বলেই আশাবাদী বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নোয়াগাঁওয়ের এই লেখক। সেইসঙ্গে নতুন বইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি সমানভাবে…
আরও পড়ুন
অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিও; মারাঠি সাহিত্যিককে শ্রদ্ধা গুগলের
তথ্যসূত্র-
১. কবিরের কিতাবে কেবলই ‘ক’, শাহাদৎ হোসেন, প্রথম আলো
আরও পড়ুন
মাতৃভাষার অধিকারের দাবি, রাস্তার ধারে ২০ ঘণ্টা ধর্না মারাঠি সাহিত্যিকের
২. ২০ বছরের সাধনায় ৩ বই, যার প্রতিটি শব্দই শুরু ‘ক’ বর্ণে, মেহেদী নূর, বাংলানিউজ২৪
Powered by Froala Editor