হাতির পিঠে চেপে ভ্রমণ— অমানবিকতার নিদর্শন?

থাইল্যান্ডের (Thailand) রাজধানী ব্যাংকক। সেখান থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার পথ। সমুদ্রতীরবর্তী হুয়া হিন নগরীর বুকেই রয়েছে ছোট্ট একটি অভয়ারণ্য। না, সেখানে হাজার হাজার পর্যটকদের ভিড় জমে না সেখানে। এমনকি সেখানে গেলে হরেকরকম বন্যপ্রাণীর দেখাও মিলবে না। ছোট্ট এই অভয়ারণ্যটি তৈরি হয়েছে মূলত অবসরপ্রাপ্ত পর্যটকবাহী হাতিদের জন্য। এই অভয়ারণ্যে গেলেই দৃষ্টি কাড়বে মর্মান্তিক দৃশ্য। ধরা পড়বে, কীভাবে পর্যটন শিল্প ক্রমাগত বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বৃহত্তম স্থলচর প্রজাতিটিকে (Elephants)।

ওয়াইল্ডলাইফ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন অফ থাইল্যান্ড (ডব্লুএফএফটি)। যে অভয়ারণ্যের কথা হচ্ছিল এতক্ষণ, সেই অভয়ারণ্যের নেপথ্যে রয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিই। বিগত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে অবসরপ্রাপ্ত হাতিদের আশ্রয় দিয়ে আসছে এই সংস্থা। লড়াই চালিয়ে আসছে প্রাণী অধিকারের স্বপক্ষে। এবার তাঁদের দৌলতেই প্রকাশ্যে এল মর্মান্তিক দৃশ্য। 

সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ৭১ বছর বয়সি একটি পর্যটকবাহী হাতির ছবি প্রকাশ করে থাই সংস্থাটি। সে-ছবি একঝলক দেখলেই বোঝা যাবে, কতটা যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে রয়েছে বৃদ্ধ হাতিটি। ঝুঁকে পড়েছে পিঠ। যেন ঠিক মাঝখান থেকে ভেঙে গেছে মেরুদণ্ড। 

না, বার্ধক্য বা কোনো রোগের প্রকোপ নয়। নয় দুর্ঘটনাও। আসলে বছরের পর বছর ধরে মানুষের নির্মমতার শিকার হয়েছে ‘পাই লিন’ নামের এই মাদী হাতিটি। প্রায় ২৫ বছর এই সাদা হাতিটি কাজ করেছে থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্পে। একাধিক অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত অরণ্যে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোই ছিল তার কাজ। তবে বেশি লাভের জন্যই, ৫-৬ জন পর্যটক বহন করতে বাধ্য করা হত তাকে। সেই সঙ্গে আসনের ভার তো রয়েছেই। দিনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম কিংবা উপযুক্ত পুষ্টিও মিলত না বলেই অভিযোগ থাই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির। আর সেই কারণেই ক্রমে ক্রমে বেঁকে যায় হাতিটির মেরুদণ্ড। 

২০০৪ সালে অবসরগ্রহণ করে ‘পাই লিন’। তবে শেষ বয়সে তার সেবা-শুশ্রূষার কথা না ভেবেই, তাকে ফের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল অভয়ারণ্যে। সেখান থেকেই তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে ওয়াইল্ডলাইফ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন সংস্থাটি। তবে ‘পাই লিন’-এর এই গল্প কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বর্তমানে সবমিলিয়ে থাইল্যান্ডের এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় রয়েছে ২৪টি পর্যটকবাহী হাতি। তারা প্রত্যেকেই শিকার পর্যটন সংস্থার মালিকদের নৃশংসতার। 

সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রাণী অধিকারকর্মীদের কথায়, ঘোড়ার মতো ভারবহনে সক্ষম নয় হাতি। পাশাপাশি থাই পর্যটন শিল্পে যে-সব হাতি ব্যবহার করা হয়, তারা সকলেই বন্য হাতি। আলাদা করে এইসকল হাতিদের প্রজনন করানো হয় না। ফলে, মাত্রাতিরিক্ত ভারবহনে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের শারীরিক পরিস্থিতি। অধিকাংশক্ষেত্রেই অপুষ্টিতে মারা যায় এই হাতিরা। অথচ, এখনও পর্যন্ত এই নিষ্ঠুরতা রুখতে পাকাপাকিভাবে কোনো আইন নেই সে-দেশে। আর এই আইন প্রণয়নের জন্যই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এই নিষ্ঠুরতায় ইতি না পড়লে একদিন থাইল্যান্ড থেকে মুছে যাবে সাদা হাতিদের অস্তিত্ব— এমনটাই দাবি অধিকারকর্মীদের…

Powered by Froala Editor