লকডাউনের ফলে কর্মহীন হাতিরাও, ফিরে চলেছে নিজেদের দেশে

মাসখানেক ধরে দেখা যাচ্ছে, থাইল্যান্ডের ঘাসের জঙ্গল পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একের পর এক হাতির দল। ঠিক যেন লকডাউনের ফলে কাজ হারানো কোনো পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে যাচ্ছে নিজের দেশে। বাস্তবিক অবস্থাটা তেমনই। এই হাতির দল প্রায় ২০ বছর ধরে আছে চিয়াং মাই শহরে। এই শহরে হাতি দেখতেই আসেন বহু পর্যটক। দেশবিদেশের সেইসব পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য তৈরি হয়েছে অসংখ্য এলিফ্যান্ট পার্ক। সেখানেই একরকম বন্দিদশায় দিন কাটত হাতিদের। তবে লকডাউনের ফলে আর পর্যটকদের দেখা নেই। তাই ছাঁটাইয়ের শিকার এই হাতিরাও। এবার কাজ হারিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছে নিজেদের গ্রামে।

চিয়াং মাই শহরের কিছু দূরেই মায় কাহেম গ্রাম। সেখানে প্রাচীন কারেন উপজাতির তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠে বহু হাতি। পর্যটন শিল্পের জন্য উদ্যোগী পার্ক মালিকরা এই গ্রাম থেকেই হাতি কিনে নিয়ে আসেন। তবে এবার তারা ফিরে যাচ্ছে মায় কাহেমে। আর সেখানে গ্রামবাসীরাও সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের। তাঁদের জীবনযাত্রাই হাতির সঙ্গে জড়িয়ে। তাই এখানে লাভ-ক্ষতির অঙ্কটা বড়ো হয়ে ওঠেনি। বরং যেন গ্রামের কোনো পুরনো সদস্য ফিরে আসার ঘটনায় আনন্দিত সকলেই।

হাতির মতো বিরাট আয়তনের একটি প্রাণী পুষতে খরচ তো যথেষ্ট বেশি। একেকটি হাতির পিছনে মাসে খরচ হয় ২ লক্ষ ভাট, অর্থাৎ ৪.৫ লক্ষ টাকার চেয়েও বেশি। সেইসঙ্গে আছে মাহুতের মজুরি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ। লকডাউনের ফলে পর্যটন শিল্পে আয়ের পাল্লাটা যখন শূন্য, তখন এই বিপুল পরিমাণ খরচ সামলাতে পারছিলেন না অনেক পার্ক মালিক। অবশ্য সেভ এলিফ্যান্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এগিয়ে এসেছে। তবে তাঁরাও জোর দিয়েছেন হাতিদের তাদের প্রকৃত বাসস্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেই। আর পার্ক মালিকরাও অনেকে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন।

এপ্রিল মাসে মোট ৪৪টি হাতি ফিরে গিয়েছে মায় কাহেম গ্রামে। মে মাসের শুরুতেই রওয়ানা হয়েছে ১০০টির বেশি হাতির দল। ঠিক যেন কাজ হারিয়ে ফিরে যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকের দল। পার্থক্য কেবল একটাই, মানুষের মতো তাদের মধ্যে রোজগার হারানোর দুশ্চিন্তা নেই। যা আছে তা হল নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার আনন্দ। মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য আর বন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হবে না তাদের।