“বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও, কার্যক্ষেত্রে টেকিপের ভূমিকাই প্রধান। সময় এবং সমাজসচেতন এই প্রকল্পের উপরেই দেশের গবেষণা পরিকাঠামো অনেকটা নির্ভর করে আছে।”
বলছিলেন এনআইটি আগরতলার অধ্যাপক মৃগাঙ্গশেখর মান্না। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে সমানাধিকারের ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান টেকিপ। শুধুই যে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার, তাই নয়, কারিগরি শিক্ষার শেষে পড়ুয়াদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও টেকিপের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। দুই দশক ধরে ৭টি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাজ্য এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে স্বল্প পরিকাঠামোতে কারিগরি শিক্ষক পৌঁছে দিয়ে আসছে টেকিপ। তবে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এই পুরো প্রকল্পের ভবিষ্যতই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অধ্যাপক মান্নার কথায়, “টেকিপ বন্ধ হয়ে গেলে কতটা ক্ষতি হবে সেটা বলা সত্যিই সম্ভব নয়। কারণ কারিগরি ক্ষেত্রে গবেষণাই একপ্রকার বন্ধ হয়ে যাবে।” বিশেষ করে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বাতাবরণও অনেকটা হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি। ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছিল টেকনিক্যাল এডুকেশন কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম বা টেকিপ। আইআইটি, এনআইটি সহ বিভিন্ন রাজ্যের শ্রেষ্ঠ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাছাই করা পড়ুয়াদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হত। তবে প্রথম দফার ৩৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার পর আর এই প্রকল্প চালানো হবে না বলেই জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক। আর স্বাভাবিকভাবেই অনিশ্চিত এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে ৫০ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাই টেকিপের মধ্যে দিয়ে নিযুক্ত হয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রশ্নের মুখে পড়ছে দেশের শিক্ষানীতিও। বিশেষ করে গতবছর পাশ হওয়া নতুন শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ যথাসম্ভব কমিয়ে আনা হবে। বরং বাণিজ্যিক বিনিয়োগের উপরেই জোর দেওয়া হবে। তবে এর মধ্যে নতুন করে বাণিজ্যিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা তো তৈরি হচ্ছেই না, বরং এতদিন ধরে যে প্রকল্পগুলি টিকে ছিল তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে সিএসআইআর-এর মতো প্রতিষ্ঠানও। অন্যদিকে টেকিপের হাত ধরেই আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলি, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি কারিগরিক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতির পরিচয় রেখেছে। কেন্দ্র সরকার অবশ্য অনুরূপ প্রকল্প তৈরির কথা জানিয়েছে। কিন্তু সে উদ্যোগও যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। তাছাড়া ভারতের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি আদৌ এ-ধরণের উদ্যোগে কতটা এগিয়ে আসবে, সে-বিষয়েও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পান না বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ, জানাল ইউনেস্কো
Powered by Froala Editor