চারিদিকে সমুদ্র। জল টইটই করছে। তারই মধ্যে একটি পাখি ধীরে ধীরে পাড়ের দিকে আসছে। পাখিটি ব্রাউন পেলিক্যান প্রজাতির। কিন্তু কিছু একটা অস্বাভাবিক লাগছে। পাখিটার চেহারা কীরকম বিধ্বস্ত! একটু লক্ষ্য করতেই বোঝা গেল, পাখিটির সারা শরীরে তেল। শুধু এই পেলিক্যানটি নয়, গালফ অফ মেক্সিকো’র পুরো বাস্তুতন্ত্রই আজ ক্ষতির সম্মুখীন। আজ থেকে বছর দশেক আগে যে তেল ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা অঞ্চলে, তার প্রভাব এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আর এর ফল ভুগছে জলের প্রাণীরা।
খানিক পিছিয়ে ২০১০-এর দিকে চলে যাওয়া যাক। ওই বছরের ২০ এপ্রিল গালফ অফ মেক্সিকো-র নিচে ডিপওয়াটার হরাইজন ড্রিলিং রিগে বিস্ফোরণ হয়। যার ফলে ওখানেই ১১ জন কর্মী মারা যান। তার থেকেও বড়ো বিপদ, বিপুল পরিমাণ তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই তেলের পরিমাণ প্রায় ৭৯৫ মিলিয়ন লিটার! এত বিপুল পরিমাণ তেল সমুদ্রে মেশার পর সামুদ্রিক প্রাণীদের কীরকম সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল, তা সহজেই অনুমেয়।
ওই ঘটনার দশ বছর কেটে গেছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশনের একটি রিপোর্টে বলে হয়েছে, গালফ অফ মেক্সিকো’র পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এখনও সেখানকার বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়ে আছে। আর তার ফল আজও ভুগছে সেখানকার প্রাণীরা। পেলিক্যান পাখির বর্ণনা তো আগেই দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ডলফিন, কচ্ছপদের অবস্থাও সঙ্গিন। নানারকম রোগ দেখা দিচ্ছে তাদের মধ্যে। এমন অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব পরিবেশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থার কথাই বলছেন পরিবেশবিদরা। আরও অন্তত ১২ বিলিয়ন ডলার খরচ করা প্রয়োজন এই কাজে। আর সেটা করতে করতে হয়ত আরও দশ বছর লেগে যাবে। সব মিলিয়ে, সেখাকার প্রাণী ও পরিবেশ আজও দুর্দশার মধ্যে রয়েছে।