প্রতিমুহূর্তে ভাঙছে-গড়ছে অজস্র কাঠামো, ধরা পড়ল সূর্যপৃষ্ঠের ছবি

এই বিরাট বিশ্বভুবনের আনাচে কানাচে কত না রহস্য! তার কতটুকুই বা বিজ্ঞানীরা এখনও জেনে উঠতে পেরেছেন? তবে অজানাকে জানার প্রয়াস চলছে নিরন্তর। এই যে আমাদের সবথেকে কাছের নক্ষত্র সূর্য, তার শরীরের উপর সারাদিন কত বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে। সেই উষ্ণতার আঁচ এসে পড়ছে আমাদের পৃথিবীতে। কিন্তু সেই বিপুল উষ্ণতার কারণেই সূর্যপৃষ্ঠের পরিষ্কার কোনো ছবি এতদিন বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। তবে সম্প্রতি সূর্যপৃষ্ঠের প্রায় পরিষ্কার একটি ছবি ধরা পড়েছে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ইনোয়ে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিশেষভাবে তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়েছে এই ছবি। মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে অবশ্যই মাইলস্টোন হয়ে থাকবে এই সাফল্য।

সূর্যপৃষ্ঠকে ঘিরে থাকা প্লাজমা স্তরের নীচে আশ্চর্য সব কাঠামো প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে। এতদিন প্লাজমা স্তর অতিক্রম করে সেই কাঠামোগুলির উপর ফোকাস করা সম্ভব হচ্ছিল না। ইনোয়ে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সূর্যপৃষ্ঠের উপর ফোকাস করে বিস্তারিত চিত্রগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। আর তাতেই ধরা পড়েছে আশ্চর্য সব কাঠামো। প্রায় ফ্রান্স দেশের আয়তনের একেকটি কাঠামো গড়ে উঠছে, আবার ক্রমশ উষ্ণ হয়ে মিশে যাচ্ছে প্লাজমা স্তরে। অথবা উষ্ণতা হারিয়ে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের পরিচালক থমাস রিমেলির কথায়, এতদিন যেগুলোকে একক কাঠামো বলে ভ্রম হত, বিস্তারিত এই পর্যবেক্ষণে তার মধ্যেই অসংখ্য ছোট ছোট কাঠামো দেখা যাচ্ছে। ছোট ছোট সোনালি বাদামের মতো সেইসব এককের উষ্ণতা প্রায় ৬০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই ছবির সাহায্যে সূর্যের মধ্যে সারাদিন কতকিছু ঘটে, তা আরো নিখুঁত ভাবে বোঝা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৩ সালে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ মিটার উঁচুতে, ৪ মিটারের একটি আয়নার সাহায্যে এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। সূর্যের আলোর প্রভাবে আয়না গরম হয়ে উঠলে ছবি পরিষ্কার আসে না। তাই যন্ত্রের মধ্যে উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্যেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সূর্যপৃষ্ঠের উষ্ণতা যেখানে মাত্র ৬০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে তাকে ঘিরে থাকা প্লাজমা স্তরের উষ্ণতা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি। সাম্প্রতিক চিত্রের বিস্তারিত বিশ্লেষণের ফলে এই রহস্যের সমাধান হবে বলেই মনে করছেন থমাস রিমেলি।

আগামী সপ্তাহেই ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং নাসার যৌথ উদ্যোগে শুরু হতে চলেছে 'সোলার অর্বাইটার মিশন'। তার আগে এই বিস্তারিত ছবি যে স্যাটেলাইট মিশনের কাজ অনেকটাই সহজ করল, সে-বিষয়ে সন্দেহ থাকে না।