কথায় আছে, ভালোবাসলে নিজের সবটুকু উজাড় করে দেওয়া যায়। এবার ঠিক তেমনটাই করলেন হায়দ্রাবাদের ৮৪ বছর বয়সী বৃদ্ধ। সাহিত্যকে ভালোবেসে নিজের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তুললেন আস্ত লাইব্রেরি (Library)। হায়দ্রাবাদের (Hyderabad) নিকটবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম ইয়েলাঙ্কির এই লাইব্রেরিতে জায়গা পেয়েছে প্রায় ২ লক্ষাধিক বই।
ডঃ কুরেল্লা ভিট্টলাচার্য (Dr Kurella Vittalacharya)। তেলেগু সাহিত্যের অন্যতম পরিচিত মুখ তিনি। শুধু সাহিত্যরচনাই নয়, তিনি দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন অধ্যাপনার সঙ্গেও। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহণের পর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেছেন বিনামূল্যে। এবার তাদের জন্যই এই লাইব্রেরি তৈরির উদ্যোগ নিলেন তিনি।
তেলেঙ্গানার এই প্রত্যন্ত গ্রামেই ডঃ কুরেল্লার জন্ম ১৯৩৭ সালে। কিশোর বয়স থেকেই তাঁকে আঁকড়ে ধরেছিল সাহিত্যপাঠের নেশা। কিন্তু সেই সুযোগ কই? প্রত্যন্ত গ্রামে লাইব্রেরির বন্দোবস্তই যে নেই কোনো। টোলের শিক্ষাগুরুর কাছে কিছু সাহিত্যগ্রন্থের সংগ্রহ থাকলেও তা সামান্যই। নয়তো বই পেতে ছুটতে হয় হায়দ্রাবাদ শহরে। সেই সুযোগটাও বন্ধ হয়ে গেল স্বাধীনতার সময়। রাজনৈতিক টালবাহানা চলছে রাজ্যজুড়ে। স্বাধীন ভারতের সঙ্গে হায়দ্রাবাদ সংযুক্ত হবে কিনা, তা নিয়ে চলছে বিস্তর দ্বন্দ্ব। টালমাটাল সেই পরিস্থিতিতে স্থানীয় জমিদার বন্ধ করে দেন পড়াশোনার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাটাও। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিজের রাজ্য ছেড়েছিলেন ডঃ কুরেল্লা।
আজ পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের জন্য গড়ে ওঠেনি লাইব্রেরির পরিকাঠামো। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ২০১৪ সালে নিজের গ্রামের বাড়িতেই একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন ডঃ কুরেল্লা। ব্যক্তিগত সংগ্রহের হাজার পাঁচেক বই নিয়েই শুরু হয়েছিল সেই গ্রন্থাগারের পথচলা। ধীরে ধীরে বেড়েছে সেই সংখ্যা। দেশ-বিদেশের নতুন বই সংগ্রহ করতে নিজের সমস্ত সঞ্চয় উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে গোটা বাড়িটাই পরিণত হয়েছে লাইব্রেরিতে।
তাঁর অবর্তমানে যাতে এই গ্রন্থাগার সচল থাকে, সেই ব্যবস্থাও করে ফেলেছেন এই তেলেগু সাহিত্যিক। এবার এই গ্রন্থাগারের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পালা তাঁর উত্তরাধিকারীদের হাতে। তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরাই আগামীদিনে এই গ্রন্থাগারের রক্ষণাবেক্ষণ করবে বলেই আশাবাদী ডঃ কুরেল্লা। শিক্ষাপ্রসারে প্রবীণ সাহিত্যিকের এই একক উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাতে কোনো প্রশংসাই যেন যথেষ্ট নয়…
Powered by Froala Editor