প্রতিদিন খেজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ, ‘সিঙ্গল মাদার’ সাবিত্রীর লড়াই

শীতকাল মানেই খেজুর গুড়ের দিন। তবে যতটা সুস্বাদু খেজুরের রস, ঠিক ততটাই কষ্টসাধ্য এই রস সংগ্রহ। সাধারণত পুরুষরাই করে থাকেন এই কাজ। অন্যদিকে গাছ থেকে রসভর্তি হাঁড়ি নামানোর পর তা জাল দিয়ে গুড় বানান মহিলারা। তবে তেলেঙ্গানার মেদাক জেলার রেগোডে গ্রামের একদম উল্টোছবি চোখ টেনেছে সকলেরই। জীবিকা নির্বাহের জন্য ‘শিউলি’-র কাজকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন ৩৩ বছরের এক মহিলা।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে গুড় তৈরি— সবটাই একা হাতে চালিয়ে যাচ্ছেন তেলেঙ্গানার সাবিত্রী গৌড়। শীতের বিকেলগুলোয় ঝুঁকি নিয়েই ৩০ ফুট উঁচু গাছে হাঁড়ি বাঁধতে ওঠেন সাবিত্রী। আবার সকালের আলো ফুটলেই সেই হাঁড়ি সংগ্রহ করে যেতে হয় তাঁকে। তবে এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন তিনি।

বছর চারেক আগের কথা। গ্রামের আর পাঁচটা শিউলি পরিবারের মতোই দিন কাটত সাবিত্রীর। গাছে হাঁড়ি বাঁধা কিংবা রস সংগ্রহের কাজ করতেন তাঁর স্বামী সাঁই গৌড়। সাবিত্রী তখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এমন সময় অন্ধকার মেঘ নেমে আসে পরিবারে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাঁই। বন্ধ হয়ে যায় উপার্জনের একমাত্র পথ। সম্বল বলতে মাথা গোঁজার ঠাঁই, খানিক জমি আর সার বাঁধা খেজুর গাছ।

তার কয়েকমাস বাদেই সাবিত্রীর কোলে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। কিছুদিন কাটতে সাবিত্রী বুঝতে পারেন তাঁর সন্তান বিশেষভাবে সক্ষম। কাজেই মাস গেলে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন পড়ে বেশ বড়ো অঙ্কের টাকার। নিজে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন সাবিত্রী। শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে চাকরি পেতেও অসুবিধা হয়নি তাঁর। তবে সে সুযোগ ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। সংসার ফেলে কাজে চলে গেলে সন্তানকে দেখবে কে? ফলে উপায়ন্ত না দেখে শিউলির পেশাকেই বেছে নিয়েছেন তেলেঙ্গানার এই মহিলা।

তবে কাজটা যতটা কঠিন, ততটাই কঠিন ছিল এই পথে নামাও। প্রথমত, নিজে তার আগে কোনোদিন এইভাবে ভাঁড় বাঁধেননি তিনি। তা আয়ত্ত করার পর প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় গ্রামের শিউলি কমিটির কর্মকর্তারা। মহিলা হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে তাঁরা খেজুর রস সংগ্রহের লাইসেন্স দিতে অস্বীকার করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা আদায় করেছিলেন দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ সাবিত্রী।

শুরুতে ছোটো ছোটো খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন তিনি। তবে যত দিন গেছে বেড়েছে তত দক্ষতা। বর্তমানে ৩০ ফুট উঁচু খেজুর গাছেও অনায়াসেই উঠে যান। বেঁধে আসেন মাটির হাঁড়ি। এই পেশায় রস সংগ্রহ করতে যাওয়া আসা মিলিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয় তাঁকে পায়ে হেঁটেই। প্রতিদিন। দিনের শেষে হাতে আসে মাত্র ৩৫০ টাকা। কোনোদিন রস সংগ্রহের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে থমকে যায় উপার্জন।

আরও পড়ুন
বিলুপ্তি থেকে ফেরার পথে স্যুইনো কাছিম, সন্ধান মিলল একমাত্র মহিলা সদস্যের

এত কিছুর পরও শিউলির পেশাতেই থাকার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সাবিত্রী। একা হাতেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন এই লড়াই। ভবিতব্য আর অনিশ্চয়তার সঙ্গে। সাবিত্রীর মতোই কেরলের আরেক মহিলা, শিজাও বেছে নিয়েছেন এমনই অপ্রচলিত পেশাকে। বছর দুই আগে থেকে তিনিও কাজ করছেন শিউলির...

Powered by Froala Editor