গতকালই পা দিয়েছেন একত্রিশে। বিহার নির্বাচনের এখন অন্যতম আলোচ্য ব্যক্তি এখন তিনিই। তেজস্বী প্রসাদ যাদব। ২০২০ ভোটে বাজিমাত করতে পারলে রেকর্ড তৈরি করতে পারেন ভারতের কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে। আর নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের আগে বুথফেরত সমীক্ষা জানাচ্ছে তেমনটাই।
১৯৮৯ সালে প্রথমবারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন লালুপ্রসাদ যাদব। তার মাস চারেক আগেই জন্ম তেজস্বী যাদবের। লালুর আট সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠতম তিনিই। তবে পাটনাতে স্কুল শুরু করলেও বেশিদিন সেখানে থাকা হয়নি তার। চলে যান দিল্লিতে। সেখানে শুরু করেন পড়াশোনা। সেইসঙ্গে ক্রিকেট। সবুজ মাঠেই খুঁজে পান ভালোবাসা। বিহারের বাড়িতে রাজনৈতিক আবহ থাকলেও দূরে থাকার কারণে তার ছায়া পড়েনি তেজস্বীর ওপরে। আর বয়সও নেহাতই কম যে তখন।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন জায়গার পরিবর্তন। দিল্লি পাবলিক স্কুলে সকলের থেকে একটু আলাদাই থাকতেন তেজস্বী। তবে মাঠে নামলেই ঝলসে উঠত ব্যাটিং। স্কুলের দলে সুযোগ পেতে তেমন কোনো বেগ পেতে হল না তাই। পারফর্মেন্স থেকে ডাক এল দিল্লি অনূর্ধ্ব-১৫ দলেও। বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর। সেসময় দিল্লির সেই দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ১৪ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৫ ভারত চ্যাম্পিয়ান হল দিল্লি। আর ফাইনালে শেষ বল অবধি টিকে ক্রিজে ছিলেন তেজস্বী। ক্রিজের অন্যদিকে তখন ভারতীয় দলের আরেক উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় ইশান্ত শর্মা।
খেলা আর খেলা আর খেলা। এছাড়া যেন সে সময় আর কিছুই চিন্তায় আনতে পারতেন না তেজস্বী। বুঝলেন স্কুল আর মাঠ, এই দুটো জায়গাকে একইসঙ্গে কাঁধে বয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়। ফলে মাধ্যমিক স্তর পেরোল না। ক্রিকেটের স্বার্থেই ছাড়লেন স্কুলের গণ্ডি। অবশ্য দিল্লির অনূর্ধ্ব ১৭ এবং ১৯ দলে ধারাবাহিকভাবেই খেলেছেন একটা সময়। স্নাতকও হয়েছেন দিল্লি ক্রিকেট দলের হাত ধরেই।
২০০৮ সালে অভিষেক হল ফ্র্যাঞ্চাইসি ক্রিকেটেও। দিল্লি ডেয়ারডেভিল টিমে জায়গা পেলেন তেজস্বী। তবে গোটা মরশুমই কাটিয়ে দিতে হল রিজার্ভ বেঞ্চ কিংবা প্যাভিলিয়নে বসে। ২০০৯ সালে ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট দলেরও অংশ হয়েছিলেন তিনি। সৈয়দ মুস্তক আলি ট্রফিতে খেলেছেন চারটি ম্যাচ।
জয় এসেছিল। কিন্তু কয়েকটি ম্যাচ দেখেই যেন কর্মকর্তারা নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন তাঁর ভাগ্য। বন্ধ হল মিডল অর্ডারে সুযোগ আসা। ভারতীয় দলে খেলার স্বপ্নও কি ভারী হয়ে উঠল একটু? সেই দৌড় থেকেও ছিটকে গেলেন হাঁটুর চোটের কারণে। একই সঙ্গে ছোটো থেকে খেলে আসা সতীর্থরা সকলেই প্রায় জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে।
আরও পড়ুন
দুর্ঘটনায় পা হারালেও থামেনি ক্রিকেট, বঙ্গসন্তানের নেতৃত্বেই বাইশ গজে লড়াই ভারতের
সেই রাগ, অভিমান থেকেই কি ক্রিকেটকে বিদায় জানানো? কে জানে? ২০১৩ সালে ক্রিকেটের মাঠ থেকেই সোজা চলে এলে রাজনীতির ময়দানে। ২০১৫ সালেই নির্বাচিত হলেন রাঘোপুরের এমএলএ হিসাবে। যেখানে লালুপ্রসাদ যাদব রাজত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন দীর্ঘ সময়। গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্সের হয়ে ডেপুটি-মুখ্যমন্ত্রীরও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ছিলেন নীতিশ কুমারের ক্যাবিনেটের অন্যতম।
আজ সেই নীতিশ কুমারই বিপক্ষ তেজস্বীর। একসময় খেলার ময়দান ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। ভালোবাসা সত্ত্বেও ছেড়ে আসতে হয়েছে সবুজ মাঠ আর ব্যাট-বলের সখ্য। তবে এবারের লড়াইটা? হিসেব বলছে,তেজস্বীর নামে অসংখ্য অভিযোগ থাকার পরেও রাজনীতিতে চূড়ান্ত সফল তেজস্বী। সেই ধারাই কি বজায় থাকবে বিহারের ২০২০ রাজ্যসভা নির্বাচনেও? তা দেখার জন্যই তাকিয়ে রয়েছেন শুধু বিহার নয়, সারা ভারতের মানুষ। কারণ তাঁর জয়ই এখন বদলে দিতে পারে ভারতীয় রাজনীতির অনেক সমীকরণ…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেগস্পিনার তিনি, বোর্ডের সঙ্গে সংঘাতে ছেড়েছিলেন ক্রিকেট