১৬ বছরের কিশোর টিজে কিম। বিমান চালানোর লাইসেন্স এখনও সে পায়নি। কিন্তু এর মধ্যেই তার ছোট্ট কেসনা ১৭২ বিমানে চড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ভার্জিনিয়ার আকাশে। আইন অবশ্য সে ভাঙেনি, কারণ বছর খানেক হল সে পাইলট স্কুলে ট্রেনিং নিচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই যে সে এমন সাহসী হয়ে উঠবে, সেটা কেউ ভাবতে পারেননি। কিম নিজেও জানতেন না। কিন্তু করোনা ভাইরাসের উপদ্রবই তাকে আকাশে ডেকে নিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মহামারীর মুখে চিকিৎসার সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে সর্বত্র। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে ধুঁকছে অনেক হাসপাতালই। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে শহরাঞ্চলের বড় হাসপাতালগুলিতে সেসব সাহায্য খানিকটা পৌঁছলেও, গ্রামাঞ্চলের ছোট হাসপাতাগুলি এখনও অবহেলায় পড়ে আছে। এই বিভেদের ছবিটাই বদলাতে চেয়েছিল কিম।
মহামারীর মোকাবিলা করতে লকডাউন তার শহরও। স্কুল বন্ধ, খেলার মাঠেও কেউ নেই। অতএব সারাদিন বাড়িতে বসে থাকার চেয়ে একটা কোনো কাজ নিয়ে থাকা অনেক ভালো। কিম তাই শুরু করে দিল তার নিজের প্রজেক্ট, এসওএস (সাপ্লাইজ ওভার স্কাইজ)। তার বাবা থমাস কিম প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে জড়ো করেন, আর ১৬ বছরের কিশোর বিমানে চড়ে সেইসব সরঞ্জাম পৌঁছে দেয় গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত হাসপাতালে। সেইসব ছোটো হাসপাতালের দিকে এতদিন কেউ ফিরেও তাকায়নি। কিমের সাহায্য পেয়ে খুশি সেইসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। আর ছাত্রের এই উদ্যোগে উচ্ছ্বাস আটকে রাখতে পারেননি তার ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর ডেভ পাওলিং। এই দুঃসময়ে দাঁড়িয়েও আশার আলো দেখাচ্ছে কিম, মনে করছেন তিনি।
গত ২৭ মার্চ এই উদ্যোগ শুরু করে কিম। প্রথমেই পৌঁছে যায় উডস্টকের কাছে একটি ২৫ শয্যার ছোট হাসপাতালে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যে এখানেও ছড়াতে শুরু করেছে। তারপর আশেপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও পৌঁছে যেতে থাকে সে। এখনও অবধি প্রায় এক হাজার পিপিই, ৫০টি মাস্ক এবং ১০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের কাজ করেছে কিম। এই সংখ্যাটা যে কিছুদিনের মধ্যেই অনেকটাই বাড়বে, সে কথা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রত্যেকেই নিজের নিজের মতো করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ তো যথেষ্ট নয়। সমস্ত নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে এই লড়াইতে। সেখানে কিমের মতো ১৬ বছরের কিশোর যোদ্ধা যে সাহসিকতার পরিচয় রাখছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।