করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে পড়াশোনার কী হবে? আশু সমাধান হিসাবে প্রায় সমস্ত স্কুল এবং কলেজ বেছে নিয়েছিল অনলাইন পঠনপাঠনের ব্যবস্থাকেই। কিন্তু কেউ কী ভেবে দেখেছিলেন, এই দেশের অসংখ্য পড়ুয়া, যাদের কাছে ইন্টারনেট যোগাযোগের নূন্যতম কোনো ব্যবস্থা নেই, তাদের কী হবে? কেউ কেউ অবশ্য নিশ্চই ভেবেছেন। ঠিক যেমন এই লকডাউনের মধ্যেই অনলাইন ক্লাসের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসেছেন কেরালার কোচি শহরের এই তিন শিক্ষিকা। আর তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এলিজাবেথ ফার্নান্দেজ।
জায়গাটা কোচি শহরের বোলগাটি সেতু। তার নিচেই বাস করছেন কয়েকটি পরিযায়ী শ্রমিকের সংসার। সমস্ত রোজগার হারিয়ে কোনোরকমে মাথার ছাদ খুঁজে পেয়েছেন এখানেই। কিন্তু সেই ছাউনি আর শুধু বসবাসের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল না। প্রতিদিন সকালে এই জায়গাটাই হয়ে ওঠে পঠনপাঠনের জায়গা।
সামিয়া, নীমা এবং সুসান প্রতিদিন এই সেতুর নিচে চলে যান। সঙ্গে থাকে ল্যাপটপ এবং অন্যান্য পঠন সামগ্রী। তাছাড়াও থাকে ১০ জন কচিকাঁচার জন্য মিষ্টি, লজেন্স এবং অবশ্যই মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এভাবে শিক্ষিকাদের পেয়ে খুশি তারাও। আর শিক্ষিকারা বলছেন, এই উদ্যোগটুকু না নিলে হয়তো এই লকডাউনের সময় ওরা পড়াশোনা ছেড়েই দিত। আর কোনোদিন ফিরে আসত পারত না মূল স্রোতের পঠনপাঠনে। কিন্তু তার জন্য দায়ী থাকত প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য। সেই বৈষম্যের হাত থেকেই ওদের বাঁচিয়ে রাখার এই প্রচেষ্টা কতদূর সফল হবে, সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারবে।
Powered by Froala Editor