যাঁরা বই ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে কখনও কখনও নিজের থেকেও প্রিয় হয়ে ওঠে সংগৃহীত বইগুলি। তিলে তিলে বই কিনে, জমিয়ে তাঁরা গড়ে তোলেন নিজস্ব এক লাইব্রেরি। সে এক অন্য জগৎ। বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে জীবন কাটিয়ে দেওয়া এমন মানুষের সংখ্যা দিনকেদিন কমে আসলেও, ফুরিয়ে যায়নি একেবারে। তেমনই একজন গোকুলচন্দ্র দাশ, একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
বাংলাদেশের ঢাকা নিউমার্কেটের গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। সেই তিনিই একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছেন খবরের কাগজে – ‘ব্যক্তিগত বাংলা লাইব্রেরি বিক্রি হবে’। পঞ্চাশ বছর ধরে তিল তিল করে জমানো সমস্ত বই ও পত্রিকা বিক্রি করে দিতে চান তিনি। বিজ্ঞাপনে লেখা – ‘আমার বিগত ৫০ বছরের সংগৃহীত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর মূল্যবান এবং দুষ্প্রাপ্য গবেষণামূলক এবং সমালোচনামূলক প্রায় দু’হাজার বইয়ের একটি লাইব্রেরি, ১৪টি স্টিলের আলমারি সহ বিক্রি হবে।’ পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, ‘লাইব্রেরিতে আরো আছে বিগত ৪৭ বছরের সব বাংলা দৈনিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার সাহিত্য পাতা, যা কাটিং করে বানানো যাবে ১০০টি সম্পাদিত বই।’ বিনিময়মূল্য হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, বইয়ের লাইব্রেরির জন্য ১৫ লক্ষ টাকা ও পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার জন্য ১০ লক্ষ টাকা – মোট ২৫ লক্ষ টাকা চান তিনি।
কিন্তু এতদিন ধরে জমানো এসব অমূল্য সম্পদ কেন বিক্রি করে দিতে চাইছেন তিনি? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি তথ্য। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত গোকুলবাবুর স্ত্রী, চিকিৎসার জন্য সমস্ত সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়ার পর, অবশেষে নিজের লাইব্রেরি বিক্রি করে স্ত্রী-র চিকিৎসার খরচ চালাতে চান তিনি। এ-কারণেই নিজের বিপুল বইয়ের সম্ভার বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অনেকেই সমবেদনা জানান গোকুলবাবুর এই পরিস্থিতিতে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ অর্থের কারণে শেষ পর্যন্ত লাইব্রেরিটি কিনতে রাজি হননি কেউই। পরে কেউ কেউ তাঁদের 'মাস্টারমশাই'-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, গোকুলবাবুর স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ। আসলে এই বিশাল লাইব্রেরির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় তাঁর। সেই বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে না পেরেই অবশেষে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোকুলচন্দ্র দাশ।
শেষ পর্যন্ত কারণ যাই হোক না কেন, প্রাণাধিক প্রিয় বই বিক্রি করে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত অনেকেই। তবে কি উনি চাইছেন, তাঁর সংগ্রহ নির্ভরযোগ্য কারোর হাতে যাক? প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু ৫০ বছর ধরে তিলে তিলে তৈরি করা লাইব্রেরি এভাবে অন্যের হাতে তুলে দিতে কেমন লাগবে তাঁর?
হয়তো অসহায়তা, তবুও...