এইচ. জি. ওয়েলসের সেই অলৌকিক সাইকেল সদৃশ যানটি এখনও আমাদের এক কল্পনার জগতে টেনে নিয়ে যায়। সেই সাইকেলের একদিকের হাতল টানলে অতীতে এবং অন্য হাতল টানলে ভবিষ্যতে চলে যাওয়া যায় অনায়াসে। কিন্তু এমনটা কি শুধুই কল্পনা? নাকি বিজ্ঞানের ক্রম উন্নতিতে কোনোদিন সত্যিই এভাবে সময়ের যাত্রাপথে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজও বিজ্ঞানীদের মতানৈক্যের শেষ নেই। আর এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক এবং তাঁর ছাত্র মিলে মেকানিক্সের জগতে এক বৈপ্লবিক ধারণার জন্ম দিলেন। সেই ধারণা সত্যি হলে সময়ভ্রমণ আর কল্পনা হয়ে থাকবে না, বাস্তবেও একদিন সম্ভব হবে অতীতে ও ভবিষ্যতে ঘুরে বেড়ানো।
অধ্যাপক ড. ফ্যাবিও কোস্টা এবং তাঁর ছাত্র গারমেইন টোবার গবেষণা শুরু করেছিলেন মেকানিক্সের দুই আপাত বিপরীত ধারণাকে মিলিয়ে দেওয়ার। একদিকে ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স অনুযায়ী সময়ের একরৈখিক গতিশীল ধারণা আর অন্যদিকে আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী সময়ের মাত্রিক ধারণা। টোবারের মতে, এই দুই মত আপাত বিপরীত। একটি সত্যি হলে অপরটি সত্যি হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁরা চেয়েছিলেন এই দুই তত্ত্বকে মিলিয়ে একটি নতুন গাণিতিক ধারণার ব্যাখ্যা দিতে। আর অবশেষে সেই ধারণার সন্ধান পেলেন তাঁরা।
ড. কোস্টার মতে, এতদিন সময়ভ্রমণের কথা উঠলেই একটি প্যারাডক্সের ধারণা তৈরি হত। অর্থাৎ সময়ভ্রমণ সম্ভব হলেও অন্য সময়ে গিয়ে মানুষ কোনো ধরনের কাজ করতে পারবেন না। নাহলে যে বাস্তবতার ভিত্তিটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। ধরা যাক কেউ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে গিয়ে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগীটিকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিল। তাহলে বর্তমান মহামারীর বাস্তব অস্তিত্বই মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তাই এতদিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মানুষ অতীত বা ভবিষ্যতকে দেখতে পারে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কল্পবিজ্ঞানের লেখকরাও অনেক সময় এই ধারণায় বিশ্বাস রেখেছেন। কিন্তু ড. কোস্টা এবং টোবার দেখিয়েছেন এভাবে মানুষের স্বাভাবিক স্বাধীনতা নষ্ট হতে পারে না। মানুষ সেখানে নিজের ইচ্ছেমতোই চলাফেরা করতে পারবে। কিন্তু তা এমন হবে যে বাস্তবের ভিত্তিটা নাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না।
তবে সব মিলিয়ে এই জটিল গাণিতিক ধারণা বোঝা বেশ কঠিন। টোবারের কথায়, প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না, কিন্তু সেই চেষ্টা করা যাবে। বিষয়টা প্রকৃতপক্ষে কেমন হবে, সেটা বোঝার জন্য আরও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আপাতত ‘ক্লাসিক্যাল অ্যান্ড কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি’ পত্রিকায় তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সারা পৃথিবীর নানা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী খুঁটিয়ে দেখছেন সেই গবেষণা। তবে প্যারাডক্স বাদ দিয়েই যে সময়ভ্রমণ সম্ভব, একথা সত্যিই অবাক করে।
আরও পড়ুন
বয়স প্রায় ৮.৫ কোটি বছর কম, চাঁদের বয়স নিয়ে নয়া তত্ত্ব মহাকাশবিজ্ঞানীদের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
একসময়ের শিকারিদের তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠেছিল দেশের প্রথম ‘গ্রিন ভিলেজ’