লকডাউনে প্রায় সমস্ত কর্মসংস্থাগুলিতেই চলছিল অল্প-বিস্তর কর্মী ছাঁটাই। এবার সেই পথেই এগোচ্ছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলির আয় কোথাও কোথাও শূন্যে এসে ঠেকেছে। অবস্থার সামাল দিতেই শিক্ষক ছাঁটাই করছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক। সম্প্রতি তেলেঙ্গানায় এভাবেই কাজ হারালেন এক বেসরকারি স্কুলে ১২ বছর ধরে শিক্ষকতা করা চিরঞ্জীবী. কে.। উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই পেশাবদল করলেন তিনি।
সামাজিক কাজের ওপরে এমএ এবং গ্রামীণ বিকাশে এমফিল করা চিরঞ্জীবী এখন মজুরের কাজ করছেন খাবার জোগাতে। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী এমবিএ করা পদ্মাও। যিনিও পেশায় একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকা। দম্পতির যৌথ আয় যেখানে মাসিক ৬০ হাজার ছিল, এখন তা কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে। ৬জনের সংসার চালাতে তাই দৈনিক মজুরেই রূপান্তরিত হয়েছেন তাঁরা।
চিরঞ্জীবীর মতোই আরো অনেক শিক্ষকই কাজ হারিয়েছেন তেলেঙ্গানা আর অন্ধ্রপ্রদেশে। বাধ্য হয়েই তাঁদের এখন কাজ করতে হচ্ছে গনগনে রোদে। তাঁরা অনভ্যস্ত হাতে কোদাল তুলে নিয়েছেন দৈনিক ২৫০ টাকা বেতনে। সংবাদ মাধ্যমে ওই শিক্ষক জানান, পরিস্থিতি এতোটাই জটিল হচ্ছে, কিছুদিন পরে কৃষকদের মতো শিক্ষকরাও হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন। গত এপ্রিল থেকেই বেতন বন্ধ তাঁদের। স্কুলগুলি খুলতে খুলতে অক্টোবর হয়ে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কীভাবে পেট চলবে সেই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে শিক্ষকদের।
সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছেন চিরঞ্জীবী। জানিয়েছেন, র্যা শন কার্ডে হাজার দেড়েক টাকার খাদ্যসামগ্রী পাওয়ার সুবিধা থাকলেও, মিলছে না সেটুকুও। সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা প্রথমে ত্রাণের ব্যবস্থা করলেও, এখন দিশেহারা তাঁরা। কারণ গ্রামের সকলের অবস্থাই শোচনীয়। এতো পরিমাণ মানুষকে ত্রাণ জোগানো কার্যত অসাধ্য হয়ে উঠেছে তাঁদের কাছে। চিরঞ্জীবীর মতোই কাজ হারানো অন্যান্য শিক্ষকদের দাবি, সরকার হস্তক্ষেপ করুক এই অবস্থায়। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ফাঁকা স্থানগুলিতে অতিথি শিক্ষক হিসাবেও অন্তত কাজ পাক কিছু মানুষ, এইটুকু অনুরোধ তাঁদের। এরপর সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তার দিকেই চেয়ে দিন গুনছেন উচ্চশিক্ষিত এই মানুষগুলি…
ছবি - প্রতীকী