ক্রমশ যখন পৃথিবী থেকে মুছে যাচ্ছে সবুজের আস্তরণ, তখন বিপন্ন প্রকৃতিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। তবে সম্পূর্ণ একার উদ্যোগেই গড়ে তোলা যায় আস্ত একটি বনভূমি? শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি করে দেখিয়েছেন তামিলনাড়ুর এক প্রৌঢ়। বিগত ২৬ বছর ধরে একটু একটু করে তিনি গড়ে তুলেছেন ১০০ একরের একটি বনভূমি। আর সেই বনভূমির নাম 'অরণ্য'।
উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ৯০-এর দশকের একেবারে শুরুতে। পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় ক্রমাগত বৃক্ষচ্ছেদনের প্রতিবাদে তখন গড়ে উঠেছে ‘সেভ ওয়েস্টার্ন ঘাট’ আন্দোলন। সেই পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বছর ২৫-এর ডি সর্বানন। তখনই তিনি বুঝেছিলেন, শুধু সমালোচনাতেই কোনোকিছু সম্ভব নয়। সমাজকে বদলাতে গেলে প্রয়োজন বাস্তব উদ্যোগ। আর সেই উদ্যোগ নিলেন তিনি একাই। কন্যাকুমারীর কাছেই পুথুরিয়ায় খানিকটা পরিত্যক্ত জমিকে বেছে নিলেন তাঁর কাজের জন্য। তারপর পশ্চিমঘাট এবং পূর্বঘাট পর্বতমালা থেকে সংগ্রহ করলেন নানা ধরনের গাছের চারা। তবে বনসৃজন গোছের কোনো প্রকল্প নয়। বরং গাছগুলিকে নিজের মতোই বেড়ে উঠতে দিয়েছেন। আর তার ফলেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এই বনভূমি।
এখন সেই এলাকায় গেলে দেখতে পাবেন অন্তত ৩৫ হাজার প্রজাতির গাছের সমারোহ। শুধু গাছই নয়, সঙ্গে ২৪০ প্রজাতির পাখি ৫৪ প্রজাতির প্রজাপতির বাস্তুতন্ত্র। আর এই বাস্তুতন্ত্র আকর্ষণ করে পরিবেশ বিজ্ঞানের গবেষক এবং পড়ুয়াদেরও। এমনকি বার্ড-ওয়াচারের দলও ভিড় করে সেখানে। সব মিলিয়ে এখন তাঁর উদ্যোগ সত্যিই জনপ্রিয়। অথচ ২৬ বছর আগে তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি কেউই।
শুধু পরিবেশ বা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা নয়, পাশাপাশি মানুষের সভ্যতাকেও টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বনভূমির ভূমিকা অতুলনীয়। এমনটাই মনে করেন ডি সর্বানন। সেখানে তাঁর এই মাত্র ১০০ একরের বনভূমি পৃথিবীর চেহারা আদৌ বদলাতে পারবে না বলেই মনে করেন তিনি। এর জন্য সমস্ত প্রান্তের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি নিজেও দেশের অন্যান্য প্রান্তে এমন বনভূমি গড়ে তুলতে চান। কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁর বয়স ৫০। আর কতদিনই বা এই লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন তিনি? পৃথিবীকে বদলাতে গেলে আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে। আগামীর সর্বাননদের যেন আর একা লড়তে না হয়।
আরও পড়ুন
মুম্বাই-এর বুকে ৬০০ একরের সংরক্ষিত বনভূমি, দেশের মধ্যে প্রথম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শুধুমাত্র জুলাইতেই ধ্বংস হয়েছে সাও-পাওলোর থেকেও বৃহৎ বনভূমি, সংকটে আমাজন