গত নভেম্বর মাসের কথা। তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) উপকূল থেকে ছোট্ট কাঠের ট্রলারে চেপে এডিসন এবং অগাস্টিন পাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারত মহাসাগরে (Indian Ocean)। সঙ্গে ছিলেন আরও ১৩ জন কর্মী। পেশায় সকলেই মৎস্যজীবী (Fishermen)। সাধারণত, সমুদ্রে একবার মাছ ধরতে যাওয়ার পর দেশে ফিরতে সময় লেগে যায় এক সপ্তাহ। তবে এবারের ব্যাপারটা ছিল একটু অন্যরকম। প্রথমত মাস ঘুরতেও বাড়ি ফেরার নাম নেই। এদিকে কোনো যোগাযোগ নেই ফোনেও। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল আত্মীয়স্বজনদের কপালে। ডায়েরি লেখানো হয়েছিল থানায়। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, হয়তো কোনো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তাঁরা। এবার দেড় মাস পর নাটকীয়ভাবেই প্রত্যাবর্তন করলেন সমুদ্রে ‘হারিয়ে’ যাওয়া ১৫ মৎস্যজীবী। আর তাঁদের এই প্রত্যাবর্তনের কাহিনি, রোমহর্ষক চলচ্চিত্রের থেকেও কম নয় কোনো অংশে।
ক্যালেন্ডারের তারিখ অনুযায়ী গত ২৭ নভেম্বর যাত্রা শুরু হয়েছিল এডিসন-অগাস্টিনদের। সব কিছুই চলছিল পরিকল্পনামাফিক। এমনকি দিন সাতেক সমুদ্রে কাটিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য যাত্রাও শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে সঙ্গ দেয়নি ভাগ্য। মাঝসমুদ্রে খারাপ হয়ে যায় ট্রলারের ইঞ্জিন। চেষ্টা করেও তা সারাতে ব্যর্থ হন এডিসনরা। যতদূর দেখা যায় ধূ-ধূ নীল জলরাশি। কোথাও কোনো মানুষের চিহ্নমাত্র নেই। এমন অঞ্চলে যে বাইরে থেকে সাহায্য মিলবে সেই আশাও করা যায় কীভাবে? এদিকে ততদিনে ফুরিয়ে এসেছে খাবার, পানীয় জলও।
তবে এখানেই বিপত্তির শেষ নয়। ইঞ্জিন তো খারাপ ছিলই, গত ৯ ডিসেম্বর দমকা হাওয়ায় ছিঁড়ে যায় নোঙরের দড়িও। সমুদ্রের স্রোত ক্রমশ ভাসিয়ে নিয়ে চলে তাঁদের ছোট্ট ট্রলারটিকে। দিন তিনেক পর গিয়ে ব্রিটিশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি জনহীন দ্বীপে গিয়ে পৌঁছান তাঁরা। এই দ্বীপই কয়েক সপ্তাহের জন্য হয়ে উঠেছিল তাঁদের ঘর-বাড়ি। আর এই যাপন এডিসন-অগাস্টিনদের ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল প্রাচীনকালে। জঙ্গলের কাঠ সংগ্রহ করেই উনুন জ্বালিয়েছেন তাঁরা। চাল ফুরিয়ে যাওয়ার পর খাবার বলতে ছিল শুধু মাছ আর পানীয় বলতে নারকেলের জল।
গত ১ জানুয়ারি নতুন বছরে পা দেওয়ার পরই ভাগ্য ফেরে তাঁদের। নজরে আসে জাপানের একটি পণ্যবাহী জাহাজ। ‘এসওএস’ দেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন এই জাহাজের নাবিকরা। না, নৌকা সারাতে ব্যর্থ হন তাঁরাও। তবে এডিসনদের তাঁরা পৌঁছে দেন দক্ষিণ ভারতের ভিঝিনজাম বন্দরে অবস্থিত ভারতীয় নৌসেনা বাহিনির কোস্টগার্ড সেন্টারে। এডিসনদের এই কাহিনি যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে রবিনসন ক্রুশোর গল্পকেই…
Powered by Froala Editor