লকডাউন প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির গতিপ্রকৃতিকে বদলে দিয়েছে একেবারেই উল্টোমুখে। অনলাইনে ভার্চুয়াল ক্লাস যে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের যোগাযোগ, সম্পর্কটাকে প্রভাবিত করছে তা উল্লেখ করেছেন বহু বিশেষজ্ঞই। এবার সেই ব্যবধান কমিয়ে আনতেই উদ্যোগ নিলেন চার ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক এবং সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার পড়ুয়ারা। তামিলনাড়ুর পুডুক্কোট্টাইয়ের ছোট্ট গ্রাম থোনডাইমান উড়ানীতে খুদেদের ক্লাস করাতে উদ্যোগ নিলেন নিজেরাই।
অরবিন্দ, বিঘ্নেশ, ভবানীশঙ্কর এবং সরথাস। এই চার প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতকই এখন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন থোনডাউমান গ্রামে। তৈরি হয়েছে ক্লাসের সময়সূচিও। পালাবদল করে এই চার বন্ধু ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন দায়িত্ব। দশম শ্রেণীর ১২ জন শিক্ষার্থী সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো অবধি সাহচর্য পাচ্ছেন তাঁদের। বাড়ির বাইরের খোলা মাঠেই চলছে পঠনপাঠন। অন্যদিকে, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীর আরও ২৮ জন ছাত্রছাত্রীও পাচ্ছে পরিষেবা।
গত জুলাই মাসেই স্কুলগুলি পাঠ্যপুস্তক দেওয়া শুরু করছিল। কার্যত তারপরই চার বন্ধু এই ক্লাস শুরু করার উদ্যোগ নেয়। মূলত কৃষক, খামারি, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রমিকদের শিশুদের এই পরিষেবা দেওয়াই ছিল মূল লক্ষ্য। কারণ অনটনের মধ্যেই ভার্চুয়াল ক্লাসের পরিষেবা পাওয়ার জন্য স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্যও ছিল না তাদের। ছাত্রদের জন্য নোটবই, পেন থেকে শুরু করে ব্ল্যাকবোর্ড অবধি সবেরই দায়িত্ব নিয়েছেন চার তরুণ শিক্ষক। তাঁরা প্রতি সপ্তাহের শেষে শনিবার করে নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য ব্যবস্থা করছেন পরীক্ষারও।
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই চার তরুণই জীবনের বিভিন্ন সময়ে সাহায্য পেয়েছেন তাঁদের ঊর্ধ্বতনদের থেকে। সেই ঘটনাই তাঁদের আরও উদ্বুদ্ধ করেছিল মহামারীর পরিস্থিতিতে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোয়। তবে এভাবেও যে কেউ সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে, তা কল্পনাতেও আসেনি গ্রামবাসীদের। কার্যত চার তরুণ শিক্ষককে দেবদূত হিসাবেই দেখছেন তাঁরা...
Powered by Froala Editor