বছর পাঁচেক আগের কথা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল তাঁর লড়াই। কোয়েম্বাটুর (Coimbatore) শহরের জলাশয়গুলিতে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করতে অভিনব এক প্রকল্প নিয়েছিলেন তিনি। জড়ো করেছিলেন প্রায় শ’খানেক স্বেচ্ছাসেবককে। প্রযুক্তিবিদ থেকে শুরু করে গৃহ পরিচারিকা, গাড়ি চালক, দিনমজুর— সমাজের সমস্ত অর্থনৈতিক অবস্থার মানুষরাই ছিলেন তাঁর ‘বাহিনী’-তে। লক্ষ্য, কোয়েম্বাটুর শহরের জলাশয়গুলি থেকে প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ। বছর পাঁচেক পর এই প্রকল্পের দৌলতেই স্বাস্থ্য ফিরে এসেছে তামিলনাড়ুর অধিকাংশ হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়ের।
আর মণিকন্দন (R Manikandan)। তামিলনাড়ুর ৩৪ বছর বয়সী এই যুবকই এবার পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য পুরস্কৃত হলেন ‘জলযোদ্ধা’ সম্মাননায়। আগামী মাসের শেষের দিকেই নয়াদিল্লিতে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে ‘ওয়াটার ওয়ারিয়র অ্যাওয়ার্ড’।
প্রাথমিকভাবে জলাশয় থেকে প্লাস্টিক ও অন্যান্য দূষক অপসারণই প্রধান লক্ষ্য হলেও, পরবর্তীতে মজে যাওয়া জলাশয় সংস্করণ এবং জলের স্বাস্থ্য ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয় মণিকন্দনের প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কোভাই কুলাঙ্গাল পাধুকাপ্পু আমাইপ্পু’। বছর দুয়েকের মধ্যেই সীমাইকারুভেলম, পেরিয়াকুলম, ভেলাল্লোর ইত্যাদি অঞ্চলে কয়েক লক্ষ গাছের চারা রোপণ করেন মণিকুন্দন। তাছাড়াও নদী থেকে খাল কেটে এনে ভরাট করার ব্যবস্থা করেন স্থানীয় জলাশয় এবং হ্রদগুলিকে। জলাশয়ে রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশন রুখতেও বিশেষ উদ্যোগ নেন তিনি। সবমিলিয়ে গোটা প্রকল্পে খরচ হয়েছিল প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। রাজ্যের সাধারণ মানুষদের থেকেই সেই অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন মণিকন্দন।
না, বিফলে যায়নি তাঁর এই উদ্যোগ। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই গ্রীষ্মে ধারাবাহিকভাবে খরার শিকার হচ্ছিল তামিলনাড়ুর জলাশয়গুলি। মণিকন্দনের সৌজন্যেই এবার নতুন করে যেন প্রাণ পেয়েছে সেগুলি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই প্রথম গ্রীষ্মেও জলে ভরাট হয়েছে ভেলাল্লোর হ্রদ। তবে শুধু জলাশয় সংরক্ষণই নয়, মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে প্রতিটি জলাশয়ের চারদিকেই বিশেষ অরণ্য তৈরি করেছেন মণিকুন্দন। যা পাখি এবং প্রজাপতিদের আকর্ষণ করে। বলতে গেলে, তাঁর এই উদ্যোগ সমগ্র বাস্তুতন্ত্রকেই নতুন করে বাঁচিয়ে তুলছে…
Powered by Froala Editor