১৬ বছরের মেয়ে সি শ্রীদেবী। তামিলনাড়ু-কেরালার যে বর্ডারে তার বাস, সেখানে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। কেবল মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেও কয়েক কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। বাইরের খবরাখবর সেভাবে পৌঁছয় না কিছুই। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, কারণ দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। আর সেই সূত্র ধরেই উঠে এসেছে আলোচনায়।
তিরুপুর জেলার আন্নামালাই টাইগার রিজার্ভ বেল্টে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের কেউই এতদিন দশম শ্রেণীর গণ্ডি পেরোতে পারেনি। কেউ পড়াশুনো ছেড়েছে প্রাথমিক স্তরের পরেই। কেউ ছেড়েছে হাই স্কুলের মাঝপথে। কিন্তু মেয়ের পড়াশুনোর স্বপ্নকে কোনোদিন বাধা দেননি এম চেলামাথু। কৃষিকাজ করে সামান্য উপার্জন যা হয়, তাতে কষ্টেসৃষ্টে সংসার চলে যায়। আর তার মধ্যেই মেয়েকে হোস্টেলে রেখে পড়াশুনো করিয়েছেন তিনি। মেয়ে সেই কষ্টের মর্যাদাও রেখেছে। পরিবারে তাই আজ খুশির হাওয়া।
শ্রীদেবীর বোর্ড পরীক্ষা যখন চলছিল, তখনই এল লকডাউনের খবর। হোস্টেল খালি করার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরে এসেছিল সে। পরে কেরালা সরকার বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করে, যাতে বাকি পরীক্ষাগুলো সুষ্টভাবে দিতে পারে সে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এই মেয়েকে নিয়ে তার রেসিডেনসিয়াল স্কুলের মতোই আশাবাদী ছিল কেরালা এবং তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারও। আর সেই আশা আজ বাস্তব রূপ নিয়ে হাজির।
তামিলনাড়ু রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন বোর্ডের আধিকারিক পি শানমুগম জানিয়েছেন, শ্রীদেবীর এই সাফল্য হয়তো তার জনগোষ্ঠীর আরও অনেককেই পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করবে। অনেকেই এবার হয়তো বুঝতে পারবে, মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া আর ছেলেদের সামান্য কিছু কায়িক পরিশ্রমের কাজ খুঁজে নেওয়াই জীবনের একমাত্র ভবিতব্য নয়। চেষ্টা করলে শিক্ষিত মানুষের মতোই বাঁচতে পারে তারাও। যে জীবনের স্বপ্ন আজ শ্রীদেবী দেখছে, তাতে সঙ্গত দিয়ে যাচ্ছেন তার বাবাও। মেয়ের পরীক্ষার ফল শুনে আনন্দ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তাই জানিয়েছেন, আগামী দিনে শ্রীদেবীর পড়াশুনো আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। দেখতে চান, তাঁর মেয়ে একদিন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন
সিবিএসই-র সিলেবাস থেকে বাদ নাগরিকত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ; বিতর্ক শিক্ষামহলে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রেলে নতুন নিয়োগ আপাতত স্থগিত, সংকটে অসংখ্য চাকুরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ