মহিলাকর্মীদের যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে লড়ছেন তামিলনাড়ুর সন্ন্যাসিনী

গার্হস্থ্য হিংসা, বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ছোট্ট সন্তানকে নিয়েই ছাড়তে হয়েছিল বাড়ি। তারপর শান্তির খোঁজে সন্ন্যাসিনী বেশ নিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনিই আশার আলো হয়ে উঠেছেন হাজার হাজার নিপীড়িত মহিলার। থিব্য রাকিনি (Thivya Rakini)। তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) ৪২ বছর বয়সি বস্ত্রকর্মী এবং সন্ন্যাসিনী লড়াই করে চলেছেন মহিলাদের যৌনহেনস্থার বিরুদ্ধে।

টেক্সাইল বা বস্ত্র শিল্পের কথা উঠলেই ভারতের রাজ্যগুলির তালিকায় প্রথম সারিতেই থাকে তামিলনাড়ুর নাম। দক্ষিণের এই রাজ্যে রয়েছে কয়েক হাজার বস্ত্র কারখানা। শুধুমাত্র ভারতই নয়, তামিলনাড়ুর কারখানায় তৈরি পোশাক সরবরাহিত হয় ইউরোপ ও আমেরিকায়। ‘এইচ অ্যান্ড এম’, ‘ক্লোয়ি’, ‘বারবেরি’ কিংবা ‘আরমানি’-র মতো খ্যাতনামা ব্র্যান্ডরা পোশাক তৈরি করায় তামিলনাড়ুর বস্ত্রশিল্পীদের দিয়েই। কিন্তু তামিলনাড়ুর এই বস্ত্রশিল্পকেও গ্রাস করেছে এক অন্ধকার জগৎ। বেতন সমস্যা, অতিরিক্ত কাজ তো রয়েছেই; সেইসঙ্গে ক্রমাগত ধর্ষণ, হয়রানি এমনকি হত্যার শিকার হয়ে চলেছেন তামিলনাড়ুর মহিলাশিল্পীরা। 

২০১৫ সালে তামিলনারুর টেক্সটাইল অ্যান্ড কমন লেবার ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলেন রাকিনি। তারপর থেকে এই মহিলা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে লড়াই করে চলেছেন তিনি। গ্লোবাল ফ্যাশন ও বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই ভয়াবহ বাস্তবের দিকে।

বেতন বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত ছুটি এবং কর্মসময় নিয়ে তাঁর লড়াই শুরু হয়েছিল ২০১৫ সাল থেকেই। পরবর্তীতে সেই তালিকায় যোগ দেয় নারী নিরাপত্তার কথাও। ২০১৮ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবেই ধর্ষণ কিংবা যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটে আসছে তামিলনাড়ুর কোনো না কোনো শিল্পাঞ্চলে। সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলি বৈদেশিক খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের মালিকানাধীন হলেও, তাদের সঙ্গে কর্মীদের কোনোরকম যোগাযোগ নেই বললেই চলে। সুপারভাইজার, অডিটর কিংবা স্থানীয় আধিকারিক হিসাবে যাঁদের নিযুক্ত করে রেখেছে সংস্থাগুলি— তাঁরাই ক্রমাগত অপরাধ ঘটিয়ে চলেছেন একের পর পর। ফলে, সংস্থার উচ্চস্তরে অভিযোগ দায়ের করাও একপ্রকার অসম্ভব মহিলাকর্মীদের কাছে। 

এই ঘটনার প্রতিবাদেই তামিলনাড়ুর নারীকর্মীদের একত্রিত করার লড়াই রাকিনির। ২০২১ সালে এই যুদ্ধে প্রথম বড়ো জয় পান তিনি। ২০২১ সালে তামিলনাড়ুর একটি কারখানাতেই খুন হয়েছিলেন এক দলিতা তরুণী। অভিযোগ ছিল দীর্ঘ এক বছর ধরে ধর্ষণ ও যৌনহেনস্থার শিকার হয়েছেন তিনি। তবে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেইভাবে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। এমনকি অধিকাংশ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়নি এই তথ্য। 

২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে লেবার ইউনিয়নের কনফারেন্সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন রাকিনি। তারপরই নড়ে-চড়ে বসেছিল খ্যাতনামা ব্র্যান্ড ‘এইচ অ্যান্ড এম’-এর উঁচু তলার আধিকারিকরা। নির্দেশ দিয়েছিল তদন্তের। পরবর্তীতে পুলিশি তদন্তই নিশ্চিত করে খুন ও ধর্ষণের কথা। যোগ্য শাস্তিও পায় অপরাধী। কিন্তু এখানেই কি শেষ? একজন অপরাধীর শাস্তি হওয়া মানেই কি সমস্ত মহিলাকর্মীরা নিরাপদ? না, এখানেই থেমে নেই রাকিনি। বরং, তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ইউরোপীয় সংস্থাগুলির থেকে কাজের স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আদায় করার জন্য। আশা দেখাচ্ছেন হাজার হাজার মহিলাকে… 

Powered by Froala Editor