বর্ষা আসে বছরে একবার। আর সেই জল ধরে রেখেই কৃষিকাজ চলত সারাবছর। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই সমস্যা শুরু হয় তামিলনাড়ুর কাঠিয়ানুর গ্রামের কৃষকদের। বৃষ্টির জল ধরে রাখার একমাত্র আধার যে কাঠিয়ানুর ট্যাঙ্ক, তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু সমস্ত সমস্যারই সমাধান সম্ভব। আর তাই শেষ পর্যন্ত কৃষকরাই আবার প্রাণ ফিরিয়ে আনল সেচের খালে। তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) অলাভজনক সংস্থা ধন ফাউন্ডেশনের সহায়তায় মাত্র ৫ জন কৃষক সমগ্র সেচ ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করলেন। এখন ৫০ একর জমিতে জল সরবরাহ করতে পারে কাঠিয়ানুর ট্যাঙ্ক।
মাদুরাই শহরের কাছে ছোটো গ্রাম কাঠিয়ানুর। সেখানকার মসজিদের ওয়াকফ বোর্ডের আওতায় ছিল এই ট্যাঙ্ক। বছর বছর জমির ফসলের একটা অংশ শুধু কৃষকরা ওয়াকফ বোর্ড ট্রাস্টের হাতে তুলে দিত। তবে ফলন ঠিকঠাক না হলে এই চুক্তি বাতিল করারও অধিকার ছিল কৃষকদের। এইভাবেই বছর দশেক আগে দেখা যায় প্রায় সমস্ত কৃষকই কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য জীবিকার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। কেউ গবাদি পশু পালন করছেন। কেউ বা কারখানার কাজ নিয়ে শহরে চলে যাচ্ছেন। কারণ কাঠিয়ানুর ট্যাঙ্ক থেকে আর পর্যাপ্ত পরিমাণে জল আসছে না। যে খালের সাহায্যে এই জলাধার নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল, নগরায়নের কোপ পড়েছে তার উপরেও। ২০১২ সালে ১৮ মিটার চওড়া সেই খাল অনেকটাই বুজিয়ে ফেলা হয়। খালের প্রস্থ দাঁড়ায় মাত্র ৬ মিটার।
জলের পরিমাণ যত কমতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে দূষকের পরিমাণ। ট্যাঙ্কের জল থেকে শুরু করে সেচের খাল, পুরোটাই ঢেকে যায় আগাছায়। ২০১৭ সাল থেকেই জল অ্যাসিডিক হয়ে যেতে শুরু করে। তাতে অক্সিজেনের পরিমাণও ভীষণ কমে যায়। ২০১৯ সালে স্থানীয় সেচ বিভাগ থেকে বলা হয়, কাঠিয়ানুর খালের জল আর ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু তাহলে চাষ-আবাদ হবে কী করে? অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু সিধুরামু, কুমারেশন, আলাগুসুন্দরম ও আরও দুজন কৃষক তাঁদের এতদিনের জীবিকা ছেড়ে দিতে রাজি হলেন না। কীভাবে খালের জল আবার ফিরিয়ে আনা যায়, তা তাঁরা জানেন না। কিন্তু এটুকু জানেন, সেটা অসম্ভব নয়।
৫ জন কৃষক মিলে যোগাযোগ করলেন ধন ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজেরাই কাজ শুরু করলেন। অতিমারী পরিস্থিতিতে কাজ বাধা পেয়েছে বারবার। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ঠিক সময়ে এসে পৌঁছায়নি। তবুও হাল ছাড়েননি তাঁরা। আর অবশেষে ২ বছরের চেষ্টায় সাফল্যও পেলেন তাঁরা। অবশ্য নদীর সঙ্গে যে খাল দিয়ে ট্যাঙ্কটি যুক্ত ছিল, সেটাকে প্রসারিত করার অনুমতি মেলেনি। কিন্তু গত বর্ষায় যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামী শীতের চাষও ভালোভাবেই হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। এভাবেই অন্তত ২৫টি পরিবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখ থেকে আবার ফিরে এল এতদিনের চেনা জীবিকায়।
আরও পড়ুন
৮৫টি নদীর জল নিয়ে এশিয়ার প্রথম ‘জলের জাদুঘর’ বাংলাদেশে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে বিচলিত তরুণ প্রজন্ম, বাড়ছে উদ্বেগ, জানাল গবেষণা