পাহাড়ের গায়ে একটা ছোট্ট বাড়ি। দেওয়াল জোড়া জানলা। জানলার ওইপারে খাদ। দু’পাশ থেকে এসে মিশে ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি। চারপাশে যত দূর দেখা যায়, সবুজ। এখানে এখনও পর্যটকদের কোলাহল নেই, গিজগিজ করা হোম স্টে বা হোটেলের ভিড় নেই। থাকার মধ্যে আছে এলিয়ে থাকা মিহি রোদ, আকাশে টাঙানো নীল চাদর আর হিমালয়। আর আছেন তামাং গোষ্ঠীর পাহাড়ি মানুষরা। কিছু জিজ্ঞেস করলেই তাঁদের মুখের হাসি ছড়িয়ে পড়ে উপত্যকা বিছিয়ে।
তামাং গাঁও। দার্জিলিং পাহাড়ের কোলে একটি ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। দূষণ, হইহল্লা, ভিড়ের থেকে দূরে একটুকরো লুকোনো স্বর্গ। যারা প্রকৃতির মাঝে কয়েকটা দিন প্রাণভরে শ্বাস নিতে চান, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এই মুক্তাঞ্চল।
এখানে প্রতিটা সকাল কবিতার মতো। গরম চা বা কফিতে চুমুক দিতে দিতেই কানে আসবে কত্ত নাম না জানা পাখির কিচিরমিচির। সঙ্গে ঝিরিহিরি বয়ে চলা পাহাড়ি ঝোরার শব্দ। প্রাতঃরাশ সেরে পাহাড়ি পথে বেরোলেই ক্যানভাসটা বদলে বদলে যাবে প্রতি বাঁকে। গ্রামে কয়েক ঘর তামাং গোষ্ঠীর মানুষের বাস। চাষবাসই মূল পেশা। সারা বছরই কিছু না কিছুর চাষ হয়। সারাদিনের পর বড়ো অলীক সন্ধে নামে এই গাঁয়ে। দূরের পাহাড়ে জোনাকির মতো আলো আর গ্রাম জুড়ে জোনাকির ঢল। সমস্ত পাহাড়, গ্রাম নিঝুম হয়ে আসে। শীত বাড়লে আগুন জ্বলে কয়েকটা ঘরের বাইরে। আগুনকে ঘিরেই চলে বিনিময়। সেই কবেকার সময় থেকে এভাবেই নিজেদের জুড়ে রেখেছেন এখানকার মানুষেরা।
প্রায় ৭,০০০ ফিট উচ্চতায় সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের ভিতরে এই গ্রামে শীত বাসা বেঁধে আছে প্রায় সারা বছরই। শীতকালে তাপমাত্রা কখনও পৌঁছে যায় মাইনাস ৩ ডিগ্রিতেও। গ্রীষ্মে ভারি আরামদায়ক তামাং গাঁও। দিনের বেলা ১৮-২০ ডিগ্রি সেঃ আর রাতে ১০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে তাপমাত্রা। তবে ফাঁকা জায়গা, চারপাশে প্রচুর গাছপালা থাকায় শীত গায়ে লাগে খানিক বেশি।
তামাং গাঁও থেকে একদিনের হাঁটাপথ সান্দাকফু। যারা ট্রেকে তেমন অভ্যস্ত নন, তারাও রোমাঞ্চের স্বাদ পাবেন পাহাড়-জঙ্গলের রাস্তা ধরে তিনতালে জঙ্গল ট্রেক করে এলে। গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন ধোত্রে, চিত্রে, লাময়ধুরা, মেঘমা কিংবা টংলু। ছবির মতো সাজানো এক-একটি জায়গা। এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন মুংমুংখোলা, সিরি খোলা, হ্যাংগিং ব্রিজ, রিমবিক মোনাস্টারি আর গুম্ববা দাঁড়া ভিউ পয়েন্ট। গ্রাম থেকে সামান্য চড়াই ভাঙলেই আকাশ জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা অপেক্ষা করবে আপনার জন্য।
তামাং গাঁও-তে থাকার জায়গা এখনও বিরল। ‘ফ্রি সোল’ স্টে’ নামের একটি ছিমছাম চমৎকার হোম স্টে আছে। থাকার সঙ্গেই মিলবে সকালের চা, জলখাবার, লাঞ্চ, বিকেলের চা, জলখাবার ও ডিনার। আতিথেয়তায় কোনও খাদ থাকবে না। সমস্ত ব্যবস্থাই এই পাহাড়ি গ্রামটার মতোই স্নিগ্ধ। একবার এলে সমতলের দূষণ, ক্লান্তিতে ভরে থাকা শহরটায় আর ফিরতে ইচ্ছেই করবে না।
কীভাবে যাবেন:
ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। স্টেশনের সামনে থেকেই মিলবে গাড়ি। শিলিগুড়ি থেকেও গাড়ি মিলবে। সময় লাগবে ৪-৪.৫ ঘণ্টা। দার্জিলিং থেকেই শেয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন:
পারেন ফ্রি সোল’স স্টে। যোগাযোগ- ৯০৩৮৬৯৫৩০৮, ৯০৩৮২৩০২৫৩
বর্ষা বাদে যে-কোনো সময়েই ঘুরে আসতে পারেন তামাং গাঁও।