আফগানিস্তান তো বটেই, ত্রস্ত ছিল গোটা বিশ্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পরই হঠাৎ করে তালিবানের সক্রিয়তা বেড়ে যাবে, সেই আশঙ্কাই করছিলেন কূটনীতবিদরা। অনেকে মনে করেছিলেন রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ধ্বংস করে দেবে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক নির্মাণগুলিও। তবে সকলকে চমকে দিল তালিবানের সাম্প্রতিক ঘোষণা। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তালিবান গোষ্ঠীনেতা জানালেন, আফগানিস্তানের ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে সমস্ত প্রাক-ইসলামিক ধ্বংসাবশেষকে সংরক্ষণ করবে তারা। পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে অবৈধ খনন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলিতে নিরাপত্তাও প্রদান করবে তালিবান।
২০০১ সালের কথা এখনও ভোলেনি অনেকেই। তালিবান শাসনের একেবারে শেষ বছরেই ঐতিহাসিক বামিয়ান বুদ্ধমূর্তির ধ্বংসসাধন করেছিল তারা। ধ্বংসযজ্ঞ চলেছিল দেশের একাধিক মিউজিয়ামেও। তবে গত বছর থেকেই শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছিল আফগানিস্তানের এই চরমপন্থী জঙ্গি সংগঠনের। মার্কিন প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা এবং আফগানিস্তানের আর্কিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত ‘ভুল’ বুঝতে পেরেছিল তালিবানরা। অনুশোচনার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল তালিবান মুখপাত্র সুহেল শাহিনের বক্তব্যে। এমনকি বামিয়ান বুদ্ধের সংরক্ষণেও সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল তালিবান। এবার বছর ঘুরতেই তাদের ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্ত সত্যিই চমকপ্রদ।
আফগানিস্তান মূলত ইসলামপ্রধান দেশ হলেও, সপ্তম শতাব্দীর আগে বৌদ্ধধর্মই প্রধান্য পেত সেখানে। ভারত ও চিনের সঙ্গে সরাসরি সিল্করুট দিয়ে সংযুক্ত থাকার কারণেই বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল আফগানিস্তানে। তবে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধীরে ধীরে সক্রিয় হয় চরমপন্থী ইসলামিক সংগঠন তালিবান। প্রথমত, অর্থের জোগান বজায় রাখতে ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মঠ ও স্তূপগুলিতে নিয়মিতই লুঠতরাজ চালাত তারা। মূল্যবান বৌদ্ধমূর্তি এবং বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহ চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হত বৈদেশিক বাজারে। পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে ইসলাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় নির্মমভাবেই মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয় আফগানিস্তানের প্রাচীন ইতিহাস।
গত ফেব্রুয়ারি মাসেই আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও, ইসলাম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হুমকি দিয়েছিল তালিবান। তখন হলফ করেও বোঝা যায়নি মাস কয়েকের মধ্যেই ইতিহাস সংরক্ষণেও উদ্যোগী হবে তারা। অবশ্য অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর বিশ্বাস অর্জনের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত তালিবানের। তবে আশাবাদী প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। তালিবানের এই প্রতিশ্রুতি যদি সত্যি কার্যকর হয়, তবে আখেরে লাভ হবে আফগানিস্তানেরই। কারণ, তালিবান বা আল কায়েদা গোষ্ঠীর সক্রিয়তা ছাড়াও প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে দারিদ্রের কারণেই, সেইসব অমূল্য সম্পদ সংগ্রহ করে খোলা বাজারে বিক্রি করছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি অনৈতিক খনন তো রয়েইছে। প্রান্তিক এই সাইটগুলির রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সব সময় সম্ভব হয় না আফগানিস্তানের পুলিশ বা সামরিক সেনাবাহিনীর। সেই দায়িত্ব যদি তালিবানরা নিজেদের হাতে তুলে নেয়, তবে সুনিশ্চিত করা যাবে আফগান সংস্কৃতি সংরক্ষণের একটি বড়ো অংশ…
আরও পড়ুন
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই মৌলবাদী আক্রমণ? আশঙ্কায় আফগান মহিলারা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানে দু-দশকব্যাপী মার্কিন সেনা আধিপত্যের ইতি?