রাত পেরিয়ে সকাল হল। অথচ, বাড়ি ফেরার নাম নেই মায়ের। তবে মা কি হারিয়ে গেল শহরে? মাকে খুঁজতে শহরের রাস্তায় নেমেই অবাক হয়ে গেল ছোট্ট কিশোর। রাস্তার ধারে একটি মঞ্চের ওপর থেকে ঝুলছে তাঁর মায়ের দেহ। গলায় দড়ির ফাঁস। কার্ডবোর্ডে লেখা ‘দেশদ্রোহী’। ২০১৯ সালে প্রকাশিত অস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা ‘জোজো র্যা বিট’-এর এই দৃশ্যটির সঙ্গে পরিচিত অনেকেই। না, মনগড়া নয়। নাৎসি জার্মানি নাগরিকদের এভাবেই শাস্তি দিত বাড়িতে ইহুদিদের আশ্রয় দিলে। আর তাঁদের নিথর দেহ নৃশংসভাবে প্রদর্শিত হত জনসমক্ষে।
হিটলারের জার্মানির সেই স্মৃতি যেন আট দশক পর ফিরে আসছে আবার। না, জার্মানি নয়। এবার অকুস্থল হল আফগানিস্তান (Afghanistan)। হ্যাঁ, সম্প্রতি হেরাট শহরের বুকে ফুটে উঠল এই চিত্রই। চার অপহরণকারীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে শহরের জনবহুল চৌমাথায় ঝুলিয়ে দিল তালিবানরা (Taliban)। অপরাধ করলে আগামীতে ঠিক কী ধরনের শাস্তি পেতে হবে তারই দৃষ্টান্ত দেখাতে এই ‘প্রদর্শনী’। সঙ্গে মাইকিং।
সম্প্রতি, অপহৃত হয়েছিল পশ্চিম হেরাটের এক ব্যবসায়ী এবং তাঁর সন্তান। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই, তালিবানরা বন্ধ করে দেয় শহরের সমস্ত রাস্তা। শুরু হয় খানাতল্লাশি। তারপর সন্ধান মিললে দীর্ঘক্ষণের গুলিযুদ্ধে হত্যা করা হয় চার অপহরণকারীকেই। গুলিযুদ্ধে আহত হয়েছেন দুই তালিব যোদ্ধার এবং এক স্থানীয় বাসিন্দাও। স্বয়ং হেরাটের গর্ভনর জানাচ্ছেন এমনটাই।
তবে এখানেই নৃশংসতার খেলা শেষ হয়নি। আরও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালানো হয় মৃতদেহগুলিতে। তারপর রক্তাক্ত দেহগুলি এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় চৌরাস্তার মোড়, বাড়ির কার্নিশ কিংবা ক্রেনে। জনসমক্ষেই।
তালিবানের এই কর্মকাণ্ডে আতঙ্কে কাঁপছে গোটা শহর। অপহরণ নিঃসন্দেহে অপরাধ। কিন্তু কোনো অপরাধেরই শাস্তিই কি এমন বর্বর হতে পারে? নাকি সেটা হওয়া উচিত? তবে বিতর্ক উঠতে তালিবান গভর্নর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনটা দেশের আইন আর কোনটা নয়, তা ঠিক করবেন তাঁরাই।
তবে এই প্রথম নয়, বিগত এক মাসের তালিবান রাজত্বে একাধিক ঘটেছে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা। আজ থেকে আড়াই দশক আগে ঠিক এমনটাই ছিল তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। এমনকি ১৯৯৬ সালে প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাজিবুল্লাকেও খুন করে প্রকাশ্যে রাস্তায় ঝুলিয়ে দিয়েছিল তালিবানরা। দ্বিতীয় পর্যায়ের রাজত্বে ‘বদলে যাওয়া’-র প্রতিশ্রুতি দিলেও, এতটুকু বদলায়নি তারা— এবার তারই প্রমাণ মিলল হাতেনাতে…
Powered by Froala Editor