শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণ আফগানিস্তানের জারাঞ্জ শহরের সঙ্গে বাকি দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিছু একটা অঘটন যে ঘটেছে, সেটা বুঝতে সময় লাগেনি। আর তার আসল কারণটাও ধরা পড়ল কিছুক্ষণের মধ্যেই। আফগান সেনাবাহিনী জারাঞ্জ শহরে পৌঁছানোর আগেই সামাজিক মাধ্যমে ভেসে এল কিছু ছবি। খোদ জারাঞ্জ শহরের সাম্প্রতিক দৃশ্য। যাতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি অফিসে ঢুকে লুঠতরাজ চালাচ্ছে তালিবান বাহিনী। আর তাঁদের অস্ত্রের সামনে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনিক কর্তারা সকলেই। আফগানিস্তানের প্রায় সমস্ত গ্রামাঞ্চল দখল করার পর এবার একটু একটু করে শহরগুলোর দিকে এগিয়ে চলেছে তালিবান বাহিনী।
জুন মাসের শেষদিক থেকেই আমেরিকা পূর্বপ্রতিশ্রুতি মতো আফগানিস্তান থেকে সেনা অপসারণ শুরু করে। তবে শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অধরাই থেকে যায়। কারণ সেই সুযোগে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েছে তালিবান বাহিনী। আসরাফ ঘানি সরকারের সঙ্গে শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। যুদ্ধের সেই শুরু। কিন্তু তা যে এমন ভয়াবহ রূপ নেবে, সেটা আশা করেননি অনেকেই। দেখতে দেখতে একের পর এক গ্রাম তালিবানদের দখলে চলে যেতে থাকে। আফগান বাহিনী নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে জাতিপুঞ্জের কাছে। ইতিমধ্যে আমেরিকা নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, তবে এবার আসরাফ ঘানি সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু তারপরেও তালিবান আগ্রাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে শুক্রবার সকালেই কাবুলে আফগান সরকারের মিডিয়া সেন্টারের ডিরেক্টর দাবা খানকে হত্যা করে তালিবান বাহিনী। একই দিনে রাজধানী কাবুল শহরের একাংশও দখল করে নেয় তালিবানরা। কিছুদিন আগেই মন্ত্রী বিসমিল্লাহ খানের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। বিসমিল্লাহ খান বাড়িতে না থাকলেও সেই হামলায় ১০০ জনের বেশি প্রতিরক্ষাকর্মী এবং সরকারি আধিকারিক নিহত হন। মার্কিন সেনাবাহিনীর ধারণা, এখনও অবধি সারা দেশে ১ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে তালিবানরা। যদিও তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ সাধারণ মানুষ নয়। বরং গণতান্ত্রিক চিন্তাপদ্ধতির মূলে আঘাত করে ইসলামিক মৌলবাদ প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য তালিবানদের। ঠিক যেভাবে ৪০ বছর আগে মুজাহিদিনদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল আফগান যুদ্ধ।
রুশ শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে এক অন্ধকার যুগের সুচনা করেছিল মুজাহিদিনরা। যেখানে মহিলাদের শিক্ষা থেকে শুরু করে বাড়ির বাইরে পা দেওয়া পর্যন্ত কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় বৈজ্ঞানিক শিক্ষার সমস্ত প্রতিষ্ঠানও। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সম্মৃদ্ধিশালী শহর কাবুল, কান্দাহার হারিয়ে ফেলে তার গৌরব। নতুন করে আফগানিস্তানের বুকে এক অন্ধকার যুগ শুরু হতে চলেছে যেন। জারাঞ্জ শহরে কার্যত বিনা বাধায় তালিবানদের জয়লাভ সেই সম্ভাবনাকেই আরও উস্কে দিল। কোন পথে শান্তিপ্রতিষ্ঠা সম্ভব, তার উত্তর যেন খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই।
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানে দু-দশকব্যাপী মার্কিন সেনা আধিপত্যের ইতি?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চুরি হয়ে যাওয়া সামগ্রী থেকেই তৈরি হচ্ছে আফগানিস্তানের নতুন ইতিহাস