বয়স সংখ্যামাত্র, এই খেলায় তা প্রমাণ করেছেন অনেকেই। সেই টুপিতেই আরেকটি পালক গুঁজে দিলেন তেজস্বিনী সাওয়ান্ত। ১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৮০-তে কোলাপুরে জন্ম তেজস্বিনীর, সেখান থেকেই খেলায় হাতেখড়ি। তারপর বহুদিন, বহু সাফল্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে তাঁর যাত্রাপথ। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের গোল্ড, ওয়ার্ল্ড কাপের ব্রোঞ্জ ও কমনওয়েলথের একাধিক গোল্ড সিলভার ও ব্রোঞ্জ নিজের ঝুলিতে ভরার পর কাল শনিবার টোকিও অলিম্পিকের দ্বাদশ কোটা জিতে নিলেন তেজস্বিনী। চতুর্দশ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালস-এ ৫০ মিটার থ্রি পজিশন ইভেন্টে ১১৭১ স্কোরে পঞ্চম স্থানে ম্যাচ শেষ করেন তিনি। বছর ৩৯-এর তেজস্বিনী আজ থেকে ৯ বছর আগে ৫০ মিটার প্রোন ইভেন্টে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হন ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সমান স্কোর করে। তারও চার বছর আগে ২০০৬ সালের কমনওয়েলথে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে একাধিক সোনা জেতেন তিনি।
এখানেও লুকিয়ে রয়েছে এক মজার বিষয়! সারাজীবন একটিই ইভেন্ট খেলেও যেখানে শয়ে শয়ে শ্যুটার আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছতে পারছেন না, সেখানে এতবছর ধরে মোট তিনটি ইভেন্টে নিজেকে প্রায় একই জায়গায় ধরে রেখেছেন তেজস্বিনী।
কুহেলি গাঙ্গুলীর সঙ্গে তেজস্বিনী সাওয়ান্ত
একটা লম্বা সময় এবং বারেবারে কলকাতার রেঞ্জে প্র্যাক্টিস করে গেছেন তিনি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে পার করে হাসিমুখে আড্ডা দিয়েছেন, টিফিন ভাগ করে নিয়েছেন জুনিয়রদের সঙ্গে। রাইফেল শেয়ার করেছেন, প্র্যাক্টিসের মাঝে এসে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন ভাঙা-ভাঙা বাংলা উচ্চারণে। ভাবতে ভালো লাগে সেই সহজ সরল মাটির মানুষ আরও একবার নিজের স্বপ্ন ধাওয়া করে জিতে গেলেন।
যাঁরা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, জানবেন এই মিষ্টভাষী মানুষটির ভিতরে কী অদম্য জেদ লুকিয়ে রয়েছে! যদি তাঁর কেরিয়ারের শুরু থেকে ধরি, ধূমকেতুর মতো এসে ফিরে গেছেন অনেকেই। একটি দুটি ম্যাচে চমকে দিয়েছেন তাঁরা সারা বিশ্বকে, তারপর আর ভেসে থাকতে পারেননি। তেজস্বিনী তা নন। শুটিং সম্বন্ধে ন্যূনতম জানেন যাঁরা, এই নাম তাঁদের কাছে অপরিচিত নয়। তাঁর ব্যক্তিগত কোচ কুহেলি গাঙ্গুলী ছাড়া এত বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক স্কোয়াডে খুব কম খেলোয়াড়ই থেকেছেন।
এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। ২০২০ সালের টোকিও তাঁর ট্রিগারের টানে কেঁপে ওঠে কিনা, দেখা যাক। বাকিটা সময়ই বলবে। তেজস্বিনীর জন্য রইল একরাশ শুভেচ্ছা।