রিমোটেই নিয়ন্ত্রিত হবে মাংসাশী গাছ! অবাক আবিষ্কার সুইডিস গবেষকের

কীটনাশকের ব্যবহার থেকে অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্র— পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে কত পদ্ধতিই না অবলম্বন করি আমরা। কিন্তু রাসায়নিকের বদলে পতঙ্গ ধরার ও মারার কাজ যদি করে দেয় কোনো জীব? না, কুকুর-বেড়াল কিংবা নিদেনপক্ষে টিকটিকি পোষার কথা হচ্ছে না। বরং, মাংসাশী উদ্ভিদই (Carnivorous Plant) মানুষের ইশারায় ধরবে পতঙ্গ। অবাক লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি, ল্যাবরেটরিতে দূর-নিয়ন্ত্রিত মাংসাশী উদ্ভিদ-এর জন্ম দিলেন গবেষকরা।

এই আশ্চর্য আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন সুইডেনের (Sweden) লিনকোপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিমোনে ফ্যাবিয়ানো (Simeone Fabiano)। দীর্ঘদিন ধরেই নিউরোন বা স্নায়ুকোষের ওপর গবেষণা চালিয়ে আসছেন সিমোনে। এমনকি বায়োইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে জৈব স্নায়ুকোষের কৃত্রিম প্রতিস্থাপকও তৈরি করেছেন তিনি। এবার এই কৃত্রিম স্নায়ুকোষকেই কাজে লাগিয়ে দূর-নিয়ন্ত্রিত মাংসাশী উদ্ভিদের জন্ম দিলেন তিনি। 

দৃষ্টি হোক কিংবা স্পর্শ— যে-কোনো ঘটনার অনুভূতি স্নায়ুকোষের মাধ্যমেই অনুভব করে থাকি আমরা। কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গ থেকে স্নায়ুতন্ত্রের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক পালসের মাধ্যমে এই অনুভব গিয়ে পৌঁছায় মস্তিষ্কে। একইভাবে মস্তিস্কও সংশ্লিষ্ট অঙ্গে প্রতিক্রিয়ার নির্দেশ পাঠায় স্নায়ুকোষের মাধ্যমেই। মাংসাশী গাছের ক্ষেত্রেও ঘটে এই একই ঘটনা। 

তবে সিমোনে বায়োনিক প্রস্থেটিক্সের সাহায্যে তৈরি করেছেন পোকা ধরার ফাঁদ। যা দেখতে অবিকল ভিনাস ফ্লাইট্র্যাপ-এর মতোই। স্ট্যান্ডার্ড পলিমার ও সিলিকন নির্মিত বিদ্যুৎ-পরিচালিত এই প্রস্থেটিক অঙ্গই তিনি সংযুক্ত করেছেন সাধারণ গাছের ডালের সঙ্গে। অন্যদিকে তাঁর তৈরি করা বিশেষ মেশিন ইন্টারফেসই গাছের মস্তিষ্কের কাজ করবে। 

আরও পড়ুন
পাতালেও চলে শিকার, আবিষ্কৃত নতুন গোত্রের মাংসাশী উদ্ভিদ

সিমোনের তৈরি কৃত্রিম ফাঁদে কোনো পোকা বসলেই স্বল্পভোল্টেজ ব্যাটারির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক পালস সরবরাহিত হবে মেশিন ইন্টারফেসে। এক সেকেন্ডেরও কয়েকশো ভাগ সময়ের মধ্যেই যন্ত্র থেকে নির্দেশ আসবে ফাঁদ বন্ধ করার। অর্থাৎ, সাধারণ মাংসাশী বা পতঙ্গভুক উদ্ভিদের থেকেও বেশি সংবেদনশীল ল্যাবরেটরিতে তৈরি এই গাছ। পাশাপাশি কতক্ষণ এই গাছ শিকার চালিয়ে যাবে, তাও রিমোটের মাধ্যমে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা সম্ভব। 

আরও পড়ুন
আঠালো তরলেই পতঙ্গশিকার, নতুন মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পেলেন গবেষকরা

তবে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কমানোর জন্য এই গাছের নকশা তৈরি করেননি সিমোনে। তাঁর উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে মানুষের ক্ষেত্রে প্রস্থেটিক অঙ্গ ব্যবহৃত হলেও, গাছের ক্ষেত্রে হয় না তেমনটা। সিমোনে বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় এবং দূর-নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম উদ্ভিদ-অঙ্গ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আর শেষ পর্যন্তও সফলও হলেন তিনি। সম্প্রতি, তাঁর এই গবেষণাকে স্বীকৃতি জানিয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More