আঠারো শতকের শুরুর দিক সেটা। ব্রিটেন, পর্তুগাল, ফ্রান্সের মতো ইউরোপের দেশগুলি তখন উপনিবেশ তৈরির লড়াইতে নেমেছে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তবে প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন। আর সেই ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে ছিল না সুইডেনের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও। তবে তাঁদের বাণিজ্যিক লেন-দেন চলত মূলত চিনের সঙ্গে। সেসময়ই, ১৭৪৫ সালে সুইডেনের গোথেনবার্গ শহরের কাছে ডুবে গিয়েছিল সুইডিস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যতম বাণিজ্যতরী ‘গ্যালিয়ন গোথেবার্গ’। প্রায় আড়াইশো বছর নবজন্ম নিল কাঠের তৈরি সেই ভেসেল। আগামী ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকেই আবার অভিযানে নামতে চলেছে শতাব্দীপ্রাচীন বাণিজ্যতরীটি।
আজ থেকে প্রায় চার দশক আগের কথা। ১৯৮০ সাল। সুইডেনের গোথা আলভ নদীতে বেশ কিছু ডাইভার আকস্মিকভাবেই খুঁজে পান গোথেবার্গ জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ। প্রাথমিকভাবে ঐতিহাসিক সেই জাহাজটিকে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিলেও, সম্ভব হয়নি তা। দীর্ঘদিন নদীর জলে ডুবে থাকার ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সম্পূর্ণ কাঠামো। তবে ইতিহাসকে তো এত সহজে মুছে যেতে দেওয়া যায় না। ফলত, ঐতিহাসিক ভেসেলটির অনুকরণে সম্পূর্ণ নতুন একটি জাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সুইডেন সরকার। অন্যদিকে সুইডিস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্তমানে বাণিজ্য ছেড়ে হয়ে উঠেছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প। সবমিলিয়ে চার দশক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল গোথেবার্গের পুনর্নির্মাণ প্রকল্প।
তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই কাজ। কারণ, গোথেবার্গ যে সময় তৈরি হয়েছিল তখনকার প্রযুক্তি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলত, সেই ধরনের যন্ত্রাংশ এবং প্রযুক্তির হদিশ পেতেই হাঁফ ছুটে গিয়েছিল সংশ্লিষ্ট জাহাজ প্রস্তুতকারক সংস্থাটির। প্রায় সমস্ত যন্ত্রাংশই পৃথকভাবে তৈরি করতে হয়েছিল নিজেদের কারখানায়। আর চার দশকের সেই টানাপোড়েনের পর সম্প্রতি নয়া রূপ পেল দ্বিতীয় গোথেবার্গ।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কাঠের তৈরি জাহাজ এটিই। অতীতের কথা খেয়াল রেখেই নবনির্মিত জাহাজটিতেও রাখা হয়েছে প্রাচীন আমলের পাল। মোটর নয়, বরং বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়েই চলবে এই জাহাজ। সর্বোচ্চ গতি হবে আনুমানিক ১২ নট প্রতি ঘণ্টা। পণ্য ছাড়াও সর্বোচ্চ ৬০০ জন যাত্রীকে বহন করতে সক্ষম এই বাণিজ্যতরী। প্রায় ১৯২ ফুট দীর্ঘ এবং ৩৬ ফুট চওড়া এই জাহাজটি আগামী ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকেই সমুদ্রে ফিরছে আবার। গন্তব্য, সেই চিন। ঐতিহাসিক গোথেবার্গের পথেই, লন্ডন, লিসবন, এথেন্স, চেন্নাই, সিঙ্গাপুর, হংকং হয়ে পৌঁছাবে সাংহাই নগরীতে।
আরও পড়ুন
কলকাতার বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় মহিলা পুরোহিত, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ৬৬ পল্লীর
উল্লেখ্য, প্রাচীন গোথেবার্গের হাত ধরেই চিন থেকে প্রথম চা এবং চাল পৌঁছেছিল সুইডেনে। এবারেও অন্যথা হবে না তার। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে সুইডেনের সমুদ্রে চালানো হয়েছে দ্বিতীয় গোথেবার্গকে। আর তার কর্মদক্ষতায় রীতিমতো অবাক নির্মাতারাও। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এখন তার প্রত্যাবর্তন কেবল সময়ের অপেক্ষামাত্র।
আরও পড়ুন
দু’সপ্তাহ জ্বলার পর ডুবল রাসায়নিক কার্গো জাহাজ, বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পরিত্যক্ত জাহাজে চার বছর নিঃসঙ্গবাস, অবশেষে মুক্তি নাবিকের