এই শতাব্দীর শুরুর দিক। ক্রিকেটের মাঠে ফিল্ডিংকে এক অন্যমাত্রা এনে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা জন্টি রোডস। দেখিয়ে ছিলেন, একদিনের ক্রিকেটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে ফিল্ডিং-এর। ২০০৩ সালে ক্রিকেটার জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পরে শুরু করেছিলেন কোচিং। এবার সেই খাতাতেই শুরু হতে চলেছে নতুন অধ্যায়। সুইডেনের হেড কোচের দায়িত্ব নিচ্ছেন প্রোটিয়া তারকা।
বর্তমানে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে ফিল্ডিং ও ব্যাটিং কোচের ভূমিকায় রয়েছেন জন্টি রোডস। তবে আইপিএল শেষ হলেই ভারতকে বিদায় জানাবেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলাতেই সুইডেন জাতীয় দলের হেড কোচ হিসাবে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার খবর পাকাপাকি জানায় সুইডেনের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা ‘ক্রিকেট সুইডেন’।
ক্রিকেটের দুনিয়ায় পিছিয়ে থাকা দেশ হয়েও দ্রুত উত্থান ঘটছে সুইডেনের। যদিও সুইডেনের প্রথম ক্রিকেট ক্লাব তৈরি হয়েছিল ১৮৮৩ সালে, ক্রিকেট সেইভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি সুইডেনে। ছিল না জাতীয় দলও। ১৯৯০ সালে সুইডেনে তৈরি হয় সুইডিস ক্রিকেট ফেডারেশন। ১৯৯১ সালে আইসিসি’র সদস্যপদ গ্রহণ করে সুইডেন। প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ হয় ১৯৯৩ সালে। তবে তা লোয়ার ডিভিশন ইউরোপিয়ান ক্লাবে।
একবিংশ শতকের একের দশকের শুরু থেকেই আস্তে আস্তে মাথা তুলে দাঁড়ানোর লড়াই চালাচ্ছিল সুইডেন। ২০১১ থেকে ২০১৭-এর মধ্যে প্রথম ডিভিশন ইউরোপিয়ান ক্রিকেটেও খেলার সুযোগ পেয়েছিল তারা। মূলত তরুণদের নিয়ে গড়া টিম নিয়েই এখন জমাট বাঁধছে প্রথম সারির ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন।
কিন্তু জার্মানির মতোই সুইডেনের ক্রিকেট টিমের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই সুইডেনের আদি বাসিন্দা নয়। ২০১৫ সালে যখন সারা পৃথিবী জুড়েই অশান্ত হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতি, তখন সুইডেন সুযোগ করে দিয়েছিল লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের। আফগানিস্থান, পাকিস্তান, ইরানের মতো দেশ থেকে আসা সেইসব শরণার্থীরাই এখন সুইডেনের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। আর তাঁদের সাধ্যমতো সাহায্য করে যাচ্ছে সুইডেনের ক্রিকেট ফেডারেশন। পূর্ণ সমর্থন জোগাচ্ছেন সুইডেনের নাগরিকরাও।
আর তারই ফলাফল স্বরূপ গত দু’বছরে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে সুইডেনে। গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বিশ্বের ক্রিকেট র্যা ঙ্কিং-এ ৪৩-এ উঠে এসেছে এই দেশ। গত ২০১৯-এর মে মাসে সুইডেন পৌঁছেছিল ৩৭-এও। জন্টি রোডসের কোচ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া সহজ করে দেবে সুইডেনের লক্ষ্যকে। গুণগতভাবে সমৃদ্ধ করবে তরুণ খেলোয়াড়দের।
আরও পড়ুন
১২০ বছর আগে, অলিম্পিকে খেলা হয়েছিল ক্রিকেটও; স্বর্ণপদক জিতেছিল কোন দেশ?
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১১ বছরের কেরিয়ারে জন্টি রোডস খেলেছেন ৫২টি টেস্ট ম্যাচ এবং ২৪৫টি ওয়ান ডে ম্যাচ। টেস্ট ও ওয়ান-ডেতে তাঁর সংগ্রহ যথাক্রমে ২৫৩২ এবং ৫৯৩৫ রান। রয়েছে ১৪০টি ক্যাচের রেকর্ডও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি ক্যাচের গণ্ডি অতিক্রম করা প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড় তিনিই।
তবে ভাগ্য কোনোদিনই সঙ্গ দেয়নি রোডসকে। ক্রিকেটের পাশাপাশিই একজন প্রখ্যাত হকি খেলোয়াড় ছিলেন জন্টি রোডস। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অলিম্পিক খেলার সুযোগ এলেও হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের জন্য ছিটকে গেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণার পর জীবনের শেষ সিরিজেও খেলতে পারেননি রোডস। ভবিতব্য তাঁকে যেন সরিয়ে নিয়েছিল খেলার জীবন থেকে। ক্যাচ ধরতে গিয়েই ভেঙেছিল হাতের কবজি। তবে খিদেটা কমেনি তাঁর। একসময়ের তাঁর অনবদ্য খেলোয়াড়ি পরোয়ানা এখন সঞ্চার করে চলেছেন বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে। এখন দেখার তাঁর হাত ধরে সুইডেন কতটা সাফল্য আনতে পারে আন্তর্জাতিক মহলে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১৫ বছরের বর্ণময় ক্রিকেট কেরিয়ার, জেনে নিন ধোনির সেরা পাঁচটি ইনিংস