বাংলাদেশের একদম দক্ষিণে সুন্দরবন। তারপরেই রয়েছে বিস্তৃত নীল জলরাশি। বঙ্গোপসাগর। ভূগোল বইতে, বা অ্যাটলাসের বইতে দেখলেও, নানা রহস্য নিয়ে বসে আছে এই সাগর। সুন্দরবন থেকে ১৮৫ কিমি দূরে রয়েছে সেইরকমই একটি রহস্য। যাকে বলে ‘ভয়ংকর সুন্দর’। নাম ‘সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড’। পৃথিবীর ১১তম গভীর সমুদ্র খাত।
নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এর মাহাত্ম্য। সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড— অর্থাৎ যার কোনো তল নেই। বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উপত্যকা বাস্তবিকই অতল প্রায়। অন্তত ওখানের বাকি অংশের তুলনায় তো বটেই। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় এক লক্ষ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল এই অঞ্চলের। তারপর সমুদ্রে জলও বেড়েছে, বেড়েছে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডের রহস্যও।
এই অঞ্চলটি নিয়ে নানা জনের নানা মত। স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি ‘নাই বাম’। বাম শব্দটি জেলেরা ব্যবহার করে গভীরতা বোঝাতে। নাই বাম-এর অর্থ এর গভীরতা মাপা যায়নি। ব্রিটিশ আমলেও চলেছিল গবেষণা। ডুবে যাওয়া যুদ্ধজাহাজের খোঁজে এসে সোয়াচ-এর নামকরণ করেন বিজ্ঞানীরা।
তবে সমুদ্র গবেষকদের কাছে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডের গুরুত্ব আরও ব্যাপক। তাঁদের মতে, বঙ্গোপসাগরের এই অংশটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট। বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী বসবাস করে এই জায়গায়। ডলফিন, হাঙ্গর, কচ্ছপের প্রজননের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এটি। উল্লেখ্য, এটি পৃথিবীর একমাত্র সোয়াচ যেখানে এই তিনটি সামুদ্রিক প্রজাতির একসঙ্গে দেখা মেলে। ২০১৭-এর শেষদিকে বাংলাদেশের কয়েকজন গবেষক এখানে যান। তাঁদের কথাতেই উঠে এসেছে এখানকার অপূর্ব প্রাণীজ ভাণ্ডারের। তিমি, পপাস ডলফিন, ইমপ্লাইস ডলফিন, ইরাবতী ডলফিন, হ্যামারহেড শার্ক-সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সহাবস্থান এখানে। বলা যেতে পারে, নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
১৯১৪ সালে এই অঞ্চলটিকে মেরিন প্রটেক্টেড অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখন এই অঞ্চলটিকে কেন্দ্র করে কীভাবে ব্লু-ইকোনমি তৈরি করা যায়, সেটারই ভাবনা চিন্তা চলছে। সেই সঙ্গে চলছে অনুসন্ধানের কাজও। ভবিষ্যতে এখানকার বাস্তুতন্ত্র যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হবে।