সীতা মায়ের চুল
পুরুলিয়ার এই পাহাড়ে রামসীতা এসেছিলেন, বনবাস কালে। গ্রীষ্মকালে গাছে গাছে ঝুলে থাকে কালো কালো কিছু পাতলা ঝুরঝুরা। চুলের মতই প্রায়। হয়তো বা কোনো শুকিয়ে যাওয়া লতা।
গাঁ বুড়ো বলল - পান্তা খেতে চেয়েছিলেন রামচন্দ্র। সীতা ঠাকুর আগের রাতে জল ঢেলে রেখেছিলেন তাতে। শালপত্রে খুব যতন করে বেড়ে দিয়েছিল বাসি ভাত, সজনে শাক আর লবণ। রামচন্দ্র বললেন, কাঁচা নংকা কুথা?
কাঁচা নংকা তো নাই, খুঁজতে গেলেন সীতা ঠাকুরানী। এ বনে ও বনে খুঁজে একটাও নংকা পেলেন না। সীতা মাথা নিচা করে ছিছল পিছল করে মুখে বুলে পেলাম নি গ। রামচন্দ্র রাগ করে খাওয়া ছেড়ে উঠে যান। সীতার মন গুমান হয়।অভিমানে দু হাতে মাথার চুল ছিঁড়তে থাকেন। সিটা ছিল বৈশাখ মাস। আজ ও বৈশাখ এলে লতায় পাতায় বৃক্ষ শাখায় ঝুলে থাকে সীতা মায়ের চুল।
ঘোষবাবু
সকালে হাঁটতে যাই। একটা বাড়ির সামনে একটা অচেনা লতানো গাছ বাড়ির গ্রিল বেয়ে উঠছে। ভারি সুন্দর পাতা, খাঁজকাঁটা, উজ্জ্বল সবুজ। বাড়িতে লোকজন তেমন দেখি না।
শীত এলো, মনে হল গাছটা মরে যাচ্ছে। পাতাগুলো হলুদ হয়ে খসে পড়ল। শুধু দড়ির মতো লতার কঙ্কাল পড়ে রইল।
শীত শেষে বসন্ত আসে। দেখি কাঠি কাঠি কঙ্কাল লতার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে লাল লাল ফুলকুঁড়ি। একজন প্রৌঢ়া জল ঢালছেন।
জিজ্ঞেস করি, এই লতাটার নাম কী?
উনি বললেন, ঘোষবাবু।
দেবী
দণ্ডকারণ্যের পারুল কোটের কাছে এই দেবীর থান। খুব জাগ্রত দেবী। শিলামাত্র, কিন্তু সবাই জানে ইনি পরমা সুন্দরী। ইনি শরীরে কাপড় রাখেন না। যে কাপড়েই ঢেকে দেওয়া হোক, পড়ে যাবে। গিঁট বেঁধে দিলেও গিঁট খুলে যাবে।
এই শিলামূর্তি উৎসবের সময়েও নিরাবরণা থাকেন।
ইনি স্থানীয় আদিবাসীদের দেবী।
এখন ইনি শিলা বটেন, কিন্তু সবাই জানে একসময় তিনি ছিলেন অসামান্যা সুন্দরী। যখন শত্রুরা গাঁ দখল করতে আসত, মা তখন উলঙ্গিনী হয়ে শত্রুপক্ষের যোদ্ধাদের রূপের ফাঁদে টেনে এনে তাদের রক্ত শুষে নিতেন। এই জন্যেই তো এই পাথরটা লাল হয়ে আছে। বারবার শত্রুরা আসত বলে মা কাপড় পরাই ছেড়ে দিলেন। উলঙ্গিনী বলেই পাথর হয়ে আছেন, ইচ্ছে হলেই মা আবার শরীর ধরে নেবেন।
দুর্লভ মন্ডল এই দেবীকে খুব ভক্তি করে। ওঁর বিশ্বাস এই পাথর-শরীরেই মিশে আছে ওর গর্ভধারিণী।
পড়শিদের কাছে ওর মায়ের গল্প শুনেছে দুর্লভ।