লকডাউনের সময় পৃথিবীর আকাশ ভরে উঠেছিল পাখির ডাকে। কিন্তু জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই আবারও হারিয়ে যাচ্ছে তারা। আর এর মধ্যেই হিমাচল প্রদেশের জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিদের রহস্যমৃত্যু চিন্তায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। প্রথমে একটা দুটো পাখির মৃতদেহ পাওয়া যেতে শুরু করে। এখন প্রতিদিন ৪০০-র বেশি পাখির মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে পং জলাভূমি অঞ্চলে। এক সপ্তাহ পরেও এখনও তার কারণ জানতে পারেননি কেউই।
গত ১৮ ডিসেম্বর পং জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যুর ঘটনা বনবিভাগের কর্মচারীদের নজরে আসে। যদিও সেদিন জলাভূমিতে ৩টি গুজ ও ১টি টিল প্রজতির মৃতদেহ পাওয়া যায়। সংখ্যাটা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলেও বিশেষ দুশ্চিন্তার কারণ ছিল না। কিন্তু পরের দিনই সংখ্যাটা ৪০০ ছাড়িয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই নড়েচড়ে বসেন বনবিভাগের সংরক্ষণ বিভাগের কর্তারা। ইতিমধ্যে জলন্ধর, দেরাদুন সহ দেশের ৪টি পরীক্ষাগারে পাখিগুলির মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। যদিও মৃত্যুর কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। প্রাথমিক পরীক্ষায় এটুকু বোঝা গিয়েছে, কোনোধরণের বিষক্রিয়া পাখিদের শরীরে ঘটেনি। তবে গুজ প্রজাতির পাখিগুলি মৃত্যুর আগে বেশ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারও কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি।
১৯৭৬ সালে হিমাচল প্রদেশের নাগরোটা উপত্যকা অঞ্চলে এই জলাভূমিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীকালে আইইউসিএন-এর তরফ থেকেও মিলেছে স্বীকৃতি। প্রতি বছর বার-হেড গুজ সহ বেশ কয়েক প্রজাতির টিল তো আসেই, এমনকি ভরতপুর অভয়ারণ্য ছাড়া ভারতের এই একটি অঞ্চলেই রেড-নেক গ্রিব প্রজাতির পাখির দেখা মেলে প্রতি বছর। মোট ১৮ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে শীতের সময় পাখির ঝাঁকে ভরে থাকে। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে সাময়িক বসবাস শুরু করে পরিযায়ী পাখিরা। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ অঞ্চলে হঠাৎ এই রহস্যের উদ্রেক সত্যিই চিন্তার বিষয়। তবে সমস্যার বীজ কোথায়, সেটা খুঁজে পাওয়া না গেলে কিছু করাই সম্ভব নয়।
Powered by Froala Editor