পড়ে রইল একগুচ্ছ ব্যতিক্রমী ইচ্ছে, ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’-এর মতোই ছিলেন সুশান্ত

অভিনয় জগৎ, সিলভার স্ক্রিন, বলিউড। নাম, জশ, খ্যাতি, অর্থ, সাফল্য। যে-কোনো অভিনেতার জীবনে এই স্বপ্নগুলোই কম-বেশি ঘুরে ফিরে আসে। সুশান্ত সিং রাজপুতের হয়তো ছিল। তবে তাঁর ইচ্ছেরা আর পাঁচটা অভিনেতার মত ছিল না। বরং তাঁর স্বপ্নগুলো ব্যতিক্রমীই ছিল অন্যান্যদের থেকে।

৫০টি স্বপ্নের একটি তালিকাও তৈরি করেছিলেন তিনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে নিজের হাতে লেখা স্বপ্নপূরণের সেই খসড়ার ছবি দিয়েছিলেন ট্যুইটারে। যেখানে অনেক ইচ্ছাতেই প্রতিফলিত হয়েছে অভিনয়ের পূর্বজীবন। কিছু স্বপ্নে শায়িত রয়েছে পর্যটনের নেশা। যার মধ্যে কয়েকটি স্বপ্নপূরণ করলেও, বাকিদের অধরা রেখেই চলে গেলেন সুশান্ত।

ছোটো থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন সুশান্ত। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকায় সপ্তম হয়েছিলেন সারা ভারতে। উচ্চশিক্ষা শুরু করেছিলেন দিল্লিতে। তবে স্বপ্নের টানের সেখান থেকে সরে এসেছিলেন থিয়েটারে, নাচে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বেঁচে ছিল এক অন্য সুশান্ত। যে অভিনেতা নয়, বরং একজন চিরসবুজ শিক্ষার্থী, একজন বিজ্ঞানীপ্রেমী। যাঁর স্বপ্নের মধ্যে ঘুরে বেড়াত তারায় ভরা একটি মহাকাশ। নেশা ছিল সেই তারাদের অনর্গল ঝলমলানি পর্যবেক্ষণ করা। আকাশের তারারাই ক্লান্তি, অবসাদ মুছে দিত তাঁর, এমনটাও উঠে এসেছিল তাঁর কথায়। সেইমতো দূরবীক্ষণও বসিয়েছিলেন ফ্ল্যাটের ছাদে। লিখে রেখেছিলেন সুইজারল্যান্ডে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে গিয়ে দিন কাটানোর ইচ্ছে। নাসা-র মত আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রে অনুমতি নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন ওয়ার্কশপে।

তালিকায় মেনেই বিমান চালানো শিখেছিলেন। শিখেছিলেন কৃষিকাজ। লকডাউনে শুরু করছিলেন কোডিংয়ের ক্লাস। হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন ডবল স্লিট থেকে সাইমেটিক্স, পদার্থবিজ্ঞানের খুঁটিনাটি। বই লেখা থেকে বিবেকানন্দের তথ্যচিত্র বানানোর কথাও ভেবেছিলেন সুশান্ত। শুধু শেখার নয়, পাশাপাশি শিক্ষার আলো সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। শুরু করেছিলেন মহিলাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া। পাশাপাশি ইসরো বা নাসায় প্রতিভাবান ছাত্রদের নিয়ে যাওয়া কিংবা বিনামূল্যে শিক্ষাপ্রদানের উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু হল না আর। তার আগেই ছন্দপতন। থেমে গেলেন প্রাণবন্ত সুশান্ত। তিনি কি কোথাও এই স্বপ্নগুলোর মধ্যেই দিয়েই পুরনো সুশান্ত সিং রাজপুতকেই বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন? জানা নেই।

আরও পড়ুন
‘বরাবর লড়াকু মানসিকতাই দেখেছি সুশান্তের মধ্যে’, বলছেন সহ-অভিনেতা ডঃ কৌশিক ঘোষ

খেলার দিকেও ঝোঁক ছিল তাঁর। বাস্তবেও দীর্ঘসময় মাঠে কাটিয়েছেন রুপোলি পর্দার এমএস ধোনি। এমনকি সচিন তেন্ডুলকার পর্যন্ত প্রশংসা করেছিলেন তাঁর ব্যাটিংয়ের। বলেছিলেন, চাইলে প্রথম সারির খেলোয়াড় হতে পারার দক্ষতা আছে তাঁর। তবে বাঁ-হাতে ক্রিকেট খেলে নিজেকে পরখ করতেই চেয়েছিলেন সুশান্ত। দাবা খেলার স্বপ্ন ছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ানের সঙ্গে। সানিয়া মির্জাকেও কথা দিয়েছিলেন একসঙ্গে টেনিস খেলার। 

আরও পড়ুন
অবসাদ কাটিয়ে উঠতেই হবে আমাদের, মৃত্যুতে এই বার্তাই কি দিলেন সুশান্ত?

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে চলে যাওয়া নয়; সুশান্তের স্বপ্ন, লড়াই এই পুরো বৃত্তটাই রহস্যময়। পুরোটাই ব্যতিক্রমী অভিনয়-জীবনের সাপেক্ষে। এইসব স্বপ্ন, ইচ্ছেগুলোর মধ্যেই হয়তো তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন অবসাদের সংকেত। হাসির আড়ালে থাকা সেই কথাগুলোই আমরা বুঝতে পারিনি কোনোদিন। তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডেলের কভার ফটোয় ভ্যান গঘের আঁকা ‘স্টারি নাইট’। অদ্ভুতভাবে তখন তিনি রয়েছেন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। ভ্যান গঘ-ও একটি অ্যাসাইলামের ছোট্ট ঘরে বসেই এঁকেছিলেন এই ছবি। তার বছর খানেকের মধ্যেই মৃত্যু। শুধু ‘স্টারি নাইট’ জুড়ে বছরের পর বছর ধরে আবর্তিত হয়েছে ডিপ্রেশনের লড়াই, আলো আর অন্ধকারের দোলাচল। সেই তারাদের মাঝেই নবতম সংযোজন করে নিজেকে বসিয়ে নিলেন পাটনা-দিল্লি-মুম্বাইয়ের কক্ষপথে ঘুরতে থাকা সুশান্ত সিং রাজপুত।

আরও পড়ুন
৬ দিন আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ন

Powered by Froala Editor

More From Author See More