গত ৮ মে সিলভার স্ক্রিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘দিল বেচারা’ সিনেমার। কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণ, লকডাউন ভেস্তে দিয়েছিল সেই সূচি। জন গ্রিনের উপন্যাস ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’-এর অবলম্বনে মুকেশ চোপড়া পরিচালিত এই ছবিতে শেষবারের মত অভিনয় করেছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবিটি মুক্তির আগেই, নিজে থেকে চিরকালীন লম্বা ছুটি নিয়ে নিয়েছেন সুশান্ত। এবার সেই সিনেমাই মুক্তি পাচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হটস্টার এবং ডিজনি প্লাসে। আগামী ২৪ জুলাই।
জন গ্রিনের ২০১২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল বিশ্বের পাঠকমহলে। এই উপন্যাস নিয়ে হলিউডে তৈরি সিনেমাও পেয়েছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা। ‘দিল বেচারা’ বড় পর্দায় দেখার জন্য দর্শকদের উত্তেজনার অবকাশ ছিল না কোনো। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ছবির অনলাইন মুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক, জল্পনা।
সুশান্ত সিং রাজপুতের কথায় এর আগে বার বার উঠে এসেছিল বড়ো মাপের অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন। অভিনয়ে দর্শকদের মুগ্ধতাই আনন্দ দিত তাঁকে। তাই নিজের কাজে ১০০ শতাংশ দেওয়ারই অনর্গল চেষ্টা করতেন সুশান্ত। সহ-অভিনেতারাও জানিয়েছিলেন সে কথা। কাজেই বড় পর্দাকে ছেড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিতে স্বাভাবিকভাবেই অনীহা ছিল তাঁর।
বলিউডে সুশান্তের অভিষেক হয়েছিল ‘কাই পো চে’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে। সিনেমার শেষে মারা গিয়েছিলেন সুশান্তের অভিনীত চরিত্রটি। ‘দিল বেচারা’-তেও শেষ দৃশ্যে পুনরাবৃত্তি হবে তেমনই হৃদয়বিদারক ছবি। এ যেন অদ্ভুত সমাপতন। সিনেমাটিতে সুশান্তে পাশে অভিনয় করতে দেখা গেছে সঞ্জনা সঙ্ঘীকে।
আরও পড়ুন
সুশান্ত সিং রাজপুতকে শেষ শ্রদ্ধা ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশানাল স্পেস ইউনিভার্সিটি-র
জীবিত অবস্থায় মুক্তি পাওয়া শেষ ছবি ‘ড্রাইভ’ নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছিলেন সুশান্ত। দুঃখ পেয়েছিলেন বড়ো পর্দায় প্রকাশ না হওয়ার ব্যাপারে। তিনি মনে করতেন প্রকৃত চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাছে বড় পর্দার মোহ আলাদা। ভাল সিনেমার জন্য দর্শকদের একাংশ থাকেই বড়ো পর্দার মুক্তির অপেক্ষায়। সেক্ষেত্রে অনলাইন মিডিয়ায় দর্শক বাড়লেও, সিনেমার কদর খানিকটা হলেও কমে। আসলে সহজলভ্য জিনিসের দিকে বেশি মানুষ ঝুঁকলেও তার মূল্য কমে যায় অনেকটাই। না, ‘ড্রাইভ’ সিনেমাটি ততটাও জনপ্রিয়তা পায়নি। আর তার জন্যই চলচ্চিত্রজগতের একাংশ আঙুল তুলেছিলেন সুশান্তের দিকেই। অনেকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন যোগাযোগও। যা অবশ্যই, সারাদিন লাইম-লাইটে থাকা বড়ো-পর্দার একজন অভিনেতার অবসাদের দিকে চলে যাওয়ার একটি কারণ। এছাড়াও লকডাউন সীমাবদ্ধ করেছিল প্রবাহমান এমন একজন অভিনেতার সচলতাকে। তাঁর মৃত্যুতে উঠে এসেছিল সিনেমাজগতের অনেক তারকাদের নামেই অভিযোগ। দাবি উঠেছিল স্বজনপোষণের শিকার হয়েছিলেন সুশান্ত। এই পৃথিবী ছেড়ে দিকশূন্য পুরের দিকে রওয়া দেওয়ার পর, তাঁর শেষ সিনেমারও অনলাইন মুক্তি সুশান্তকে ন্যায্য অধিকারটুকু দিতে ব্যর্থ। দাবি করছেন অনুরাগীদের একাংশ।
আরও পড়ুন
পড়ে রইল একগুচ্ছ ব্যতিক্রমী ইচ্ছে, ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’-এর মতোই ছিলেন সুশান্ত
প্রসঙ্গত হটস্টার কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ছবির প্রকাশ ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভ উগরে দেন ভক্তরা। সরব হন শেষ বেলাতেও এই অবিচারের বিপক্ষে। প্রিয় অভিনেতার শেষ সিনেমাকে জনপ্রিয় করতে বদ্ধপরিকর তাঁরা। অনেকে দাবি করেছেন অনলাইন মুক্তির পাশাপাশি লকডাউনের পর থিয়েটারেও মুক্তি পাক ‘দিল বেচারা’। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন সূর্যবংশী, রাধে এই সিনেমাগুলি লকডাউন ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে পারলেও, ধৈর্য ধরে রাখতে পারল না ‘দিল বেচারা’-র সদস্যরা? এর কোনো সদুত্তর জোগাতে পারেননি সিনেমার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্বরাও। তবে এই সিনেমা বড়ো পর্দায় মুক্তি পেলে তাঁর প্রতি যে বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হত, তা অনস্বীকার্য। তার পরেও প্রযোজক, পরিচালকদের এই সিদ্ধান্ত অবাক করেছে সকলকে। এ কি স্রেফ ভাগ্যের পরিহাস নাকি আরো একটি চক্রান্ত? তা নিয়েই জলঘোলা শুরু হয়েছে দর্শকদের মধ্যে...
আরও পড়ুন
অবসাদ কাটিয়ে উঠতেই হবে আমাদের, মৃত্যুতে এই বার্তাই কি দিলেন সুশান্ত?
Powered by Froala Editor