‘পবিত্র রিস্তা’র সেট কখন জানি বদলে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে

বেসবরিয়াঁ। কত কয়েকদিন যাবৎ এই গানটা পাগলের মতো শুনছি। যাপন করছি। সমাপতন শব্দটা বার বার খাবি খাচ্ছে চিন্তার সমুদ্রে। কিন্তু কেন? বুঝি, এখানে প্রশ্নের গুরুত্ব উত্তরের থেকে অনেক বেশি। তাই কিছু প্রশ্নের উত্তর আজীবন খুঁজে যেতে হয়। দুটো আলাদা মানুষ অথচ কী অদ্ভুত সামঞ্জস্য। ঝাড়খণ্ডের অনামী তরুণ যখন খড়্গপুর প্ল্যাটফর্ম চত্বরে দৌড়াদৌড়ি করত, তখন পাটনা তনয় হয়তো নিজের ঘরে বসে একের পর এক অংক সল্ভ করছে। অথচ আমি অনুভব করতে পারি। চোখদুটো। এক। যাতে মাখা ছিল স্বপ্নের উষ্ণতা। তাকে সত্যি করার বাসনা। মধ্যবিত্ত চিন্তার মায়াজালে যার দৃষ্টিভঙ্গি ঝাপসা হয়ে যায়নি কখনও!

'জাগির তেরি, তেরা খাজানা
ইয়ে তিসনেগি হ্যায়, ইয়ে প্যায়াস হ্যায়'...
‘বাজার’ সিনেমাটা দেখার সময় একটা সংলাপ ছিটকে এসে লেগেছিল বুকে, হার অওর জিতমে সির্ফ এক চিজকা ফর্ক হোতা হ্যায়। ভুখ। কিছু করে দেখানোর যে তৃষ্ণা তা মানুষকে ছুটিয়ে নিয়ে যায়। সমস্ত বিপত্তি লুটিয়ে পড়ে এক অসমাপ্ত ক্ষুধার সামনে। আমি তার জলজ্যান্ত নমুনা দেখেছি এই দুজনের প্রতিটা পদক্ষেপে। স্ট্রাইক ম্যায়ঁ লুঙ্গা তু বস আউট মত কারওয়াইয়ো, এই সংলাপ বলার সময় চোখ ও শরীর থেকে ছিটকে বেরোনো যে আত্মবিশ্বাস তাতে মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে সুশান্ত সিং রাজপুত যেন লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল কোথাও৷ টিকিট কালেকটার থেকে ভারতীয় অধিনায়ক হওয়ার যাত্রার শুরু সেই সেখান থেকেই!  

'কিউঁ রোকনা, অব ইয়ে কারওয়াঁ  
যায়ে ওহিঁ লে জায়ে যাহাঁ'..
হিসেব মেলাতে বসে বার বার চমকে উঠছিলাম গতকাল। 

দৌড়ে ট্রেনে ওঠার দৃশ্যের সঙ্গে কলেজ ড্রপ আউটের মুহূর্ত হুবহু মিলে যাচ্ছিল। আগন্তুকের মতো। চাকতিতে চাকতিতে। যেন ম্যাজিক। যাকে ব্যাখ্যা করার মতো বোধ মানুষের তৈরি হয়নি আজও। দেখছিলাম পবিত্র রিস্তার সেট বদলে যাচ্ছে ২০০৭-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে। যেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে তলিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। অথচ দু'জায়গাতেই কী অসম্ভব পরিমিত পারফরমেন্স। সমস্ত প্রত্যাশাকে একার কাঁধে বয়ে চলার গল্প। পাশের সিটে প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গী অঙ্কিতাও। কেরিয়ারের প্রথম চূড়ায় পদার্পণ করতে না করতেই অ্যাক্সিডেন্ট। বিচ্ছেদ। ব্রেক আপ। ভাঙনের কোনো সংজ্ঞা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি, তবুও জীবনের কিছু নির্দিষ্ট অধ্যায়কে ফিরে দেখলে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়! 

'ক্যা ইয়ে উজালে,ক্যা ইয়ে অন্ধেরে
দোনো সে আগে হ্যায় মনজর তেরে'..
অফ ফর্ম। রান নেই। সমস্যা। বিতর্ক। নোংরামি। সমস্ত কিছুর পরেও ফোকাস নড়েনি বিন্দুমাত্র। এক ওভারে ষোলো রান নিমেষের মধ্যে ফিনিশ হয়ে গেছে। রাবতার পরেও সোনচিড়িয়াতে আগুন লেগেছে স্ক্রিনে। এক একটা অসামান্য অভিব্যক্তি নিখুঁত স্ট্যাম্পিং এর মতোই ছিটকে দিয়েছে উইকেট। সমস্ত বাউন্সার আর নিন্দা সামলে ফাইনালের শেষ ছয়ের মতো বক্স অফিস ফাটিয়ে দিয়েছে ছিছোরে। অথচ তাও আমি এবার তাকিয়ে দেখছি, হিসেব মিলছে না। সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ ধরে বয়ে চলা জীবন্ত ঘটনাক্রম বদলে যাচ্ছে ইতিহাসে! 

সুশান্ত, এম এসকে আত্মস্থ করেছিলেন নিজের মধ্যে। হাঁটাচলা, কথা বলা থেকে বাচনভঙ্গি। হেলিকপ্টার শট পর্যন্ত আয়ত্তে এনে ফেলেছিলেন। দুজনের মিল খুঁজতে খুঁজতে তাই আমি হারিয়ে যাই এক অজানা শহরে। বুঝতে পারি না, আসলে ভুলটা হল কোথায়। একটা সমস্ত ঠিক হওয়া অঙ্কের শেষটা হঠাৎ ঘেঁটে যাওয়ার কারণ হিসাবে উঠে আসে অনেকগুলো ঘটনা। আর আমি দেখতে পাই, পরীক্ষার খাতা জমা দিয়েই, ছুটে এগিয়ে যাচ্ছে এক তরুণ, আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠছে,
'কিউঁ রশনি তু বাহার তলাশেঁ, তেরি মশালেঁ হ্যায় অন্দর তেরে'..

আরও পড়ুন
আকাশের তারার নামকরণ সুশান্তের নামে, বিরল শ্রদ্ধার্ঘ অনুরাগীর

Powered by Froala Editor